তোপধ্বনিতে সেহরি-ইফতারে জেগে ওঠে যে দেশ
উসমানীয় শাসন অবসানের পর রাষ্ট্রীয়ভাবে সেক্যুলারিজমের নীতি গ্রহণ করা হলেও বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় কার্যক্রম ও উৎসব পালনের ক্ষেত্রে শতবছর আগের ঐতিহ্যকে এখনো ধরে রেখেছে তুরস্ক।
শুধু গান গেয়ে বা উঁচু গলায় ডেকে নয়, রাস্তায় ঢোল-দামামা বাজিয়ে পবিত্র রমজান মাসে তুরস্কে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সেহেরিতে জাগিয়ে তোলেন একদল মানুষ। ঢোলের শব্দে জেগে ওঠে পুরো ইস্তাম্বুল। উসমানীয় ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে তুরস্কের মুসলমানরা এখনো ঢাকঢোল পিটিয়ে, তোপধ্বনি দিয়ে এক ভিন্ন আমেজে পবিত্র রমজান মাসকে বরণ করে। যুগ যুগ ধরে একদল মানুষ কেবল রমজান মাসের তাৎপর্যকে সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে বাজিয়ে চলেছেন ঢোল-দামামা। এর পেছনের বিশ্বাস হলো, সেহরিতে মুসলমানদের জাগিয়ে দেয়া অন্য মুসলমানের জন্য সওয়াব ও সৌভাগ্য বয়ে আনা।
রমজানকে স্বাগত জানাতে ব্যানার-ফেস্টুনে বিভিন্ন অভিবাদনমূলক বাক্য লিখে রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাঙানো হয়। পুরো রমজানে তুরস্কজুড়ে বিরাজ করে রোজা পালনের এক উৎসব।
তুরস্কের মুসলমানরা সেহরি ও ইফতারির আয়োজন করেন গণজমায়েত করে রাজকীয়ভাবে। এতে থাকে তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী খাবারের সমাহার। খেজুরের পরিবর্তে জলপাই দিয়ে তুর্কিরা ইফতারের সময় রোজা ভাঙেন। ইফতারিতে হালকা খাবার হিসেবে জুস, খেজুর, পাইড বিশেষ ধরনের ঐতিহ্যবাহী রুটি, হালুয়া ও জলপাই তেলের ব্যবস্থা থাকে। ইফতারের পর চা-কফি পানের রীতি তুর্কিদের বেশ পুরনো অভ্যাস। এছাড়া তুর্কিরা সেহরির সময় ভারী খাবার খেয়ে থাকেন।
সেহরি ও ইফতারের সময় তুরস্কেও কামানের গোলার আওয়াজ শোনা যায়। দিনের বেলায় রেস্তোরাঁ এবং খাবারের দোকান বন্ধ থাকলেও দুপুরের পর থেকেই চলতে থাকে ইফতারের আয়োজন। সেহরির সময়ও রেস্তোরাঁগুলো খোলা রাখা হয়।
দেশটিতে সেহরি ও ইফতারের সময় অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষদেরও মুসলমানদের সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রেখে যোগ দিতে দেখা যায়।
রমজান মাসে সরকারি অফিস-আদালতের কর্মঘণ্টা বা সময় পরিবর্তনের কোনো আয়োজন নেই তুরস্কে। অফিস-আদালত ঠিক রেখেই তারা ইফতারের আগে ঘরে ফেরার চেষ্টা করেন।
রমজান এলেই তুরস্কের আমেজ হয় অন্যরকম। মসজিদের পাশে বইমেলা এবং কোরআন প্রতিযোগিতা তুরস্কের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি বাড়ি ও মসজিদ মুখরিত থাকে পবিত্র কোরাআন তেলাওয়াতের সুরে। তুরস্কের মানুষ রমজান মাসে কোরআন খতম করতে খুব তৎপর থাকেন।
তাসনিয়া রহমান