যুক্তরাষ্ট্র-চীনের শীতল সম্পর্কে উষ্ণতা ফেরাতে যেসব বিষয়ে সমঝোতা
ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা কমানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে সামরিক যোগাযোগ আবারও শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
স্থানীয় সময় বুধবার(১৫ নভেম্বর)যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় হওয়া দুই দেশের প্রেসিডেন্টের বিরল বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আমরা সরাসরি, উন্মুক্ত ও স্পষ্ট যোগাযোগে ফিরে এসেছি।’
গত বছর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর নিয়ে ওয়াশিংটনের সাথে সামরিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় বেইজিং। চলতি বছরের শুরুর দিকে একটি সন্দেহভাজন চীনা ‘গুপ্তচর বেলুন’ যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ভেসে বেড়ায়। পরে সেটিকে গুলি করে আটলান্টিক মহাসাগরে নামিয়ে আনে বাইডেন প্রশাসন। ওই ঘটনার পর থেকে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়,মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠক হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো প্রত্যাশা না থাকলেও দুই পরাশক্তিধর দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, এবারের আলোচনায় আমাদের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি মনে করি এই বিষয়গুলো খুবই গঠনমূলক এবং ফলপ্রসূ ছিল। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।
বৈঠকের পরে মার্কিন ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে একটি নৈশভোজে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আরও ভাল সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে খোলাখুলিভাবে কথা বলেছেন। তিনি এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন কূটনীতি ও সহযোগিতার পথে চলতে সম্মত হয়েছেন বলেও জানান চীনা প্রেসিডেন্ট।
এসময় তিনি বলেন,‘চীন-মার্কিন সম্পর্কের দরজা এখন আর বন্ধ করা যাবে না যেটা খোলা আছে।আমাদের আরও সেতু তৈরি করতে হবে এবং একে অপরের মধ্যে আরও রাস্তা তৈরি করতে হবে।"
চীনা প্রেসিডেন্ট মঞ্চ থেকে চলে যাওয়ার সময় এক সাংবাদিক বলে ওঠেন,‘সম্পর্ক এখনও কতটা শীতল তা লক্ষ্য করা যায়। তিনি এখনও শি জিনপিংকে ‘একজন ডিক্টেটর হিসেবে মনে করেন। তিনি একজন ডিক্টেটর এই অর্থে যে তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি আমাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের সরকার পরিচালনা করছেন।’
গত জুনে শি জিনপিং সম্পর্কে একই ধরণের মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই সময় তার মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ করে চীনা কর্মকর্তারা এটিকে ‘অত্যন্ত অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে বর্ণনা করেন। বৃহস্পতিবারও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রেসিডেন্টের ওই মন্তব্যকে ‘অত্যন্ত ভুল ও দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনৈতিক কারসাজি’ বলে এর কড়া প্রতিবাদ জানায়।
চীনা প্রেসিডেন্ট এর আগে স্বীকার করেছেন মার্কিন-চীন সম্পর্ক ‘কখনোই মসৃণ ছিল না।’ তবে তিনি এটাও বলেছেন, দুই পরাশক্তি একে অপরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া কোন অপশন হতে পারে না।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী এই দুই দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়ে তারা কোন প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তারা মিথেন নির্গমন কমিয়ে আনার ব্যাপারে একে অপরকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিথেন হল এক ধরণের শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাস। দেশ দুটি ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে তিনগুণ বাড়ানোর বৈশ্বিক প্রচেষ্টার প্রতিও সমর্থন জানিয়েছে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র অবৈধ ফেন্টানাইলের জোয়ার রোধ করার জন্য রাসায়নিক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এই উপাদানটি অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণের ফলে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা অনেক বেড়ে গিয়েছে। গত বছর প্রায় ৭৫ হাজার মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর পেছনে কারণ ছিল এই শক্তিশালী সিনথেটিক ওপিওড বা কৃত্রিম ওপিওড। কৃত্রিম ওপিওড হল এমন পদার্থ যা পরীক্ষাগারে সংশ্লেষিত হয় এবং যেটি মস্তিষ্কের সেই একই অংশে প্রভাব ফেলে যেমনটা কিনা প্রাকৃতিক ওপিওড যেমন, মরফিন, কোডাইন করে থাকে।
এগুলো মূলত বেদনানাশক বা ব্যথা উপশমে কাজ করে। চীনা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র এই ওষুধেই উৎপাদন করে না বরং ওষুধগুলো তৈরি করার জন্য যেসব রাসায়নিকের প্রয়োজন হয় সেগুলোর উৎসও এই কোম্পানিগুলো।
বৈঠক শুরু হওয়ার সাথে সাথে বাইডেন শিকে বলেছিলেন, আমি আমাদের কথার মূল্য দিই কারণ আমি মনে করি আমরা নেতা হিসেবে পরস্পরকে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি, কোন ভুল ধারণা বা ভুল বোঝাবুঝি ছাড়াই। চীনা নেতা এতে সম্মত হন। তিনি বলেন, সংঘাত ও সংঘর্ষ উভয় পক্ষের জন্যই অসহনীয় পরিণতি বয়ে আনে।