আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

বাছিরের আপিল শুনবেন হাইকোর্ট

দুদকের বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে বিচারিক আদালতের দেওয়া আট বছরের সাজার বিরুদ্ধে আপিল  শুনানির জন্য গ্রহণ করছেন হাইকোর্ট ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করে দেওয়া রায়ের অংশ স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত।  

আজ বুধবার (১৩ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ৬ এপ্রিল বিচারিক আদালতের দেওয়া আট বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল আবেদন করেন এনামুল বাছির।
 
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অবৈধভাবে তথ্যপাচার ও ঘুস লেনদেনের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি মিজানের তিন বছর ও দুদকের তৎকালীন পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের আট বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম।

মিজান রায়ে বিচারক বলেন, বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি মিজানের অভিযোগ প্রামাণিত হয়েছে। দুই ধারার অপরাধ একই ধরনের হওয়ায় তাকে ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলে।

এ ছাড়াও বাছিরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৬১,মানিলন্ডারিং আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাকে মানিলন্ডারিং আইনে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া দণ্ডবিধি ১৬১ ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি আদালত রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। গত ৩ জানুয়ারি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এরপর গত ২৪ জানুয়ারি একই আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করেন দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল।

২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুস দেন মিজান। ৪০ লাখ টাকার ঘুস কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। একই বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেফতার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে আছেন। অন্যদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি মিজানকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের এ কর্মকর্তা। ওই বছরের ১৬ এপ্রিল আদালত দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারের আদেশ দেন।

গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি মিজান-বাছিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এরপর তিনি মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেন। গত বছরের ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
 
এরপর নারী নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৯ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকে মিজানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। ওই বছরই ২৪ জুন সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এর অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির।

মামলার তদন্তকালে তৎকালীন ডিআইজি মিজান অভিযোগ করেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে রেহাই দিতে এনামুল বাছির তার কাছে ৪০ লাখ টাকা ঘুস নেন। ঘুস লেনদেনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শেখ মো. ফানাফিল্যাকে প্রধান করে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় তিন সদস্যের একটি দলকে।

গত বছরের ১৯ আগস্ট মামলার এক নম্বর সাক্ষী ও বাদী দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে করা অপর এক মামলায় মিজানুর রহমানসহ চারজনের ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালতে বিচার চলছে।

 

এসআই/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন