আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

এবার পুলিশের ভুলে ৪ মাস জেল খাটলেন যশোরের দিনমজুর

যশোরে পুলিশের অবহেলায় বিনা দোষে চার মাস জেল খাটতে বাধ্য হয়েছেন আশরাফ আলী মিন্টু মোল্লা নামে এক দিনমজুর। আশরাফ আলী নামে এক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বদলে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। অব্যাহতি পাওয়া মিন্টু মোল্লা বেনাপোলের দীঘিরপাড় এলাকার মৃত মোহর আলী মোল্লার ছেলে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট-ব্লাস্ট এর সহায়তায় আদালতের মাধ্যমে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগী আশরাফ আলী মিন্টু মোল্লা জানান, তিনি পেশায় ভ্যানচালক। তবে কখনও কখনও দিনমজুরের কাজও করেন। ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে স্থানীয় চৌকিদার কালা কবিরকে নিয়ে তার বাড়িতে যান বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই মাসুম। তারা এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত দীঘিরপাড়া এলাকার মৃত মোহর আলীর ছেলে আশরাফ আলী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেয়া আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপি দেখান তাকে। এসময় তারা তাকে আশরাফ আলী বলে আটক করেন। তিনি আশরাফ আলী নন জানালেও পুলিশ তাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। পরেরদিন সকালে তার পরিবারের লোকজন জন্মনিবন্ধন সনদের কপি নিয়ে থানায় গেলেও তাকে ছাড়া হয়নি। এরপর পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

তিনি আরও জানান, কারাগারে দরবার ফাইলে তিনি অভিযোগ করেন আশরাফ আলীর পরিবর্তে তাকে জেল খাটতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। গত শনিবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে যান লিগ্যাল এইড কমিটির সচিব। এসময় মিন্টু তার কাছেও অভিযোগ করেন যে তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত আশরাফ আলী নন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে লিগ্যাল এইডের আইনজীবীরা আদালতকে বিষয়টি অবহিত করেন। এরপর লিগ্যাল এইডের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার আদালতে কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আশরাফ আলী অন্য এক ব্যক্তি। এরপর যশোরের যুগ্ম দায়রা জজ ও স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৬ এর বিচারক ভুক্তভোগী মিন্টুকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।

মিন্টুর স্ত্রী ফাহিমা বেগম বলেন, তার স্বামীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। দুটি ছেলে নিয়ে কোনোমতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান তার স্বামী মিন্টু। ঘটনার দিন গত বছরের ১৬ নভেম্বর রাতে এলাকার চৌকিদার কালা কবির ও থানার এসআই মাসুম বিনাদোষে তার স্বামীকে আটকের পর জেলখানায় পাঠায়। প্রায় চার মাস তার স্বামী জেলখানায় থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে তাদের দিন পার হয়েছে। 

ব্লাস্ট যশোরের কোঅর্ডিনেটর মোস্তফা হুমায়ুন কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আটক মিন্টু সাজাপ্রাপ্ত আশরাফ আলী নন, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পর আদালত তাকে মুক্তি দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাবার নাম ও নামের প্রথম অংশ একই হওয়ায় পুলিশ তাকে আটক করেছিল। পুলিশ একটু সতর্ক হলে ও যাচাই করলে একজন নিরাপরাধ মানুষকে চার মাস জেল খাটতে হতো না। এটা পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা।

শুভ মাহফুজ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন