আর্কাইভ থেকে আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার আশঙ্কা বাংলাদেশেও বইবে ‘আরব বসন্ত’

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ করে আসছে রাশিয়া। দেশটি আশঙ্কা করছে নির্বাচনের পর বাংলাদেশে আরব বসন্তের মতো কাণ্ড ঘটানোর চেষ্টা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।

বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞাসহ কয়েকটি পদ্ধতিতে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে ওয়াশিংটন। সেইসঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার ছুতোয় অনেক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র- এমন শঙ্কাও প্রকাশ করেছে রাশিয়া। প্রমাণ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র এসব অভিযোগ আনবে বলে মন্তব্য করেছেন জাখারোভা।

শুক্রবারের বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশে আরব বসন্তের মতো পরিস্থিতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তার আগে (আগামী কয়েক সপ্তাহে) বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ আরও কয়েকটি চাপ প্রয়োগ করতে পারে ওয়াশিংটন। বাইডেন প্রশাসনের টার্গেট হতে পারে বাংলাদেশের প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার দায়ে অনেক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। অকাট্য প্রমাণ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র এসব অভিযোগ আনবে বলে মন্তব্য করেছেন জাখারোভা।

বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, সড়কে যান চলাচল বন্ধ, বাস পোড়ানো এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এসব ঘটনার সঙ্গে ঢাকায় পশ্চিমা একটি কূটনৈতিক মিশনের সন্দেহজনক কার্যকলাপের সংযোগ দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরোধীদের সঙ্গে বৈঠক, যা নিয়ে গত ২২ নভেম্বরের ব্রিফিংয়ে আমরা কথা বলেছি।

রাশিয়ার বিবৃতি

এরমধ্যে গেলো ২৩ নভেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ করেন। সেদিন তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস অক্টোবর মাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যদিও ওয়াশিটংনের তরফে সরাসরি মস্কোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে তিউনিসিয়া, মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনে সরকার উৎখাত করা হয়। গণতন্ত্রের নামে সরকার পতনের এ প্রক্রিয়াকে পশ্চিমারা আরব বসন্ত বলে উল্লেখ করে। কিন্তু সেই বসন্তের ভয়ঙ্কর পরিণতি আজও ভোগ করছে দেশগুলোর জনগণ।

আফ্রিকার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি লিবিয়ার জনপ্রিয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে হত্যার মাধ্যমে দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ থেকে দেশটি আজও পুরোপুরি বের হতে পারেনি।

আফ্রিকার আরেক দেশ মিশরে সেই আন্দোলনে স্বৈরশাসক হোসনি মুবারকের পতন হলেও দেশটির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসিকে উৎখাত এবং প্রহসনের বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এরপর দেশটির জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় আরেক কুখ্যাত সামরিক শাসক জেনারেল সিসিকে। গণতান্ত্রিক ধারায় নেই ফরাসি উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হওয়া আফ্রিকার আরেক দেশ তিউনিসিয়াও।

পশ্চিমাদের কথিত সেই বসন্তে সিরিয়ার কী হাল হয়েছে তা সবার জানা। ইয়েমেনের লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু আর দুর্ভিক্ষ পশ্চিমাদের কপটতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন