আর্কাইভ থেকে উত্তর আমেরিকা

অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার করবে ট্রেক্সাস, যা থাকছে নতুন আইনে

সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে পুলিশ।আটককৃতদের হতে পারে কারাদণ্ড বা ডলার ডলার জরিমানা। শুধু তাই নয়,আটককৃতদের দেশে ফেরত পাঠাতে আদেশ দিতে পারবেন স্থানীয় আদালত।এক্ষেত্রে ফেডারেল সরকারের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হবে না- এমনই একটি আইন কার্যকর করতে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্য।

মূলত ফেডারেল সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে আইন প্রণয়ন করেছে মার্কিন এই অঙ্গরাজ্যটি।

আইনে কী বলা হয়েছে?

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এর প্রতিবেদন অনুযায়ি, এসবি-ফোর (SB4) নামের এই আইনটিতে বলা হয়েছে-স্কুল এবং হাসপাতাল ছাড়া অন্য সব স্থানে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছে বলে সন্দেহভাজন যে কাউকে থামাতে বা গ্রেপ্তার করতে পারবে ট্রেক্সাস রাজ্য পুলিশ। অপরাধে সম্ভাব্য শাস্তির মধ্যে কারাদণ্ড বা ২ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের সীমান্ত পেরিয়ে দেশ ছাড়ার আদেশ দেওয়ার জন্য ক্ষমতা পাবেন স্থানীয় আদালত।

কেন এই আইন  প্রনয়ন টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের?

অনেকের কাছে স্বপ্নের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাস করেন বিশ্বের অনেক দেশের নাগরিক। তাদের অনেকেই অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন। এই দেশটিতে প্রবেশের জন্য মেক্সিকোর সীমান্তঘেষা টেক্সাসকেই তারা অন্যতম প্রধান রুট হিসেবে মনে করেন। মেক্সিকো সীমান্ত দিয়েই মেক্সিকো,এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে শরণার্থীরা অনুপ্রবেশ করছেন টেক্সাসে। পরবর্তীতে তারা চলে যায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে। এসব অবৈধ অভিবাসীদের ঢল ঠেকাতেই  এমন পদক্ষেপ  নিয়েছে টেক্সাস অঙ্গরাজ্য।

আইনে সই করার আগে টেক্সাসের গভর্নর  গ্রেগ অ্যাবট অভিযোগ করেন, টেক্সাসে ‘অবৈধ প্রবেশের জোয়ারের ঢেউ’ বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিছুই করেননি।বাইডেনের ইচ্ছাকৃত নিষ্ক্রিয়তায় নিজেদের রক্ষা করতে পদক্ষেপ নিতে টেক্সাসকে বাধ্য করেছে। এই আইন প্রয়োগের পর যেসব মানুষ সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে তারা টেক্সাস রাজ্যে আসতে চাইবে না। অনুমোদিত এই ব্যবস্থাটি অবৈধ প্রবেশকে ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ কমিয়ে আনবে বলেও তিনি দাবি করেন।

ক্রমবর্ধমান অবৈধ অভিবাসন,প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সীমান্ত নীতির বিষয়ে জনসাধারণের উদ্বেগ,অবৈধ অভিবাসীরা মার্কিন জনগণের রক্তকে বিষিয়ে তুলছে বলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের মাঝেই টেক্সাসের এই পদক্ষেপ সামনে এলো। যদিও টেক্সাস কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই আইনটি কার্যকর করার পরিকল্পনা করছে তা স্পষ্ট নয়। এছাড়া অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপ্রবেশের শাস্তি হিসেবে ২০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এক্ষেত্রে ওই অভিবাসীর অভিবাসন এবং অপরাধমূলক অতীত ইতিহাস বিবেচনায় নেওয়া হবে।

টেক্সাসের এই আইন নিয়ে জটিলতা

তবে টেক্সাসের প্রণয়ন করা নতুন এই আইন নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। কারণ মার্কিন আদালত আগেই রায় দিয়েছে,  শুধুমাত্র ফেডারেল সরকারই অভিবাসন আইন প্রয়োগ করতে পারে। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার ঘটনা ফেডারেল অপরাধ হিসেবে বিবেচিত অনেক আগে থেকেই। তবে এই ধরনের অপরাধ বর্তমানে ইমিগ্রেশন আদালতে দেওয়ানী মামলা হিসাবে পরিচালিত হয়ে থাকে।

সমালোচনার মুখে টেক্সাসের এই নতুন আইন

গত নভেম্বরে টেক্সাসের রিপাবলিকান-নেতৃত্বাধীন আইনসভার উভয় হাউসে অইনটি পাস হয়।আসছে বছরের মার্চেই আইনটি কার্যকর করতে চায় টেক্সাস প্রশাসন। তবে সমালোচকরা আইনটিকে ফেডারেল সুপ্রিম কোর্টের বাতিল করা ২০১০ সালের অ্যারিজোনা আইনের পর থেকে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সবচেয়ে চরম প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। অভিবাসনের সমর্থকরাও এই আ্ইনটির বিরোধীতায় নেমেছেন। তারা বলেছেন, এই আইনটি জাতিগত বিদ্বেষের সৃষ্টি করবে।

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন অব টেক্সাস এরইমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, আইনটি  ‘ফেডারেল অভিবাসন আইনকে লঙ্ঘন করে’ এবং ‘জাতিগত বর্ণবাদের ইন্ধন যোগায়’ এমন যুক্তি দিয়ে এটিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করবেন। শুধু তাই নয় এই ব্যবস্থা ঠেকাতে আইনি পদক্ষেপ নিতে মার্কিন বিচার বিভাগকে আহ্বান জানিয়ে যৌথভাবে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট দলীয় ২০ সদস্য।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন