ঘুষ লেনদেন: জামিন পেলেন না দুদকের বাছির
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আট বছরের দণ্ডিত তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে তার জামিন আবেদন ফেরত নেন আইনজীবী।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো.খুরশীদ আলম খান। বাছিরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৮০ লাখ টাকা জরিমানা স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত।
পরে খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত খন্দকার এনামুল বাছিরকে জামিন দেননি। জামিন আবেদনের ওপর অনেকক্ষণ শুনানি শেষে তার আইনজীবীরা আবেদন ফেরত (টেক ব্যাক) নিয়েছেন।
এর আগে আপিল করেছিলেন একই মামলায় তিন বছরের দণ্ডিত পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান। ৬ এপ্রিল বুধবার হাইকোর্ট তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন।
গেলো ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ মামলায় রায় দেন।
রায়ে দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছর ও পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এর মধ্যে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে মিজানকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ও বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। অপরদিকে মানি লন্ডারিং আইনের ৪ ধারায় বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাছিরের দুটি দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে তাকে পাঁচ বছর দণ্ড ভোগ করতে হবে৷
তবে দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় উভয়ে দোষী সাব্যস্ত হলেও একই ধরনের অভিযোগে দণ্ডিত হওয়ায় এ ধারায় কাউকেই সাজা দেওয়া হয়নি।
২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
পরে ৩ ফেব্রুয়ারি মিজানুর রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী শুনানি করেন। অপরদিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাছিরের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের একই কর্মকর্তা।
গেলো বছর ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এরপর তিনি মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেন। ২০২১ সালের ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।
এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।
এরপর ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ মানি লন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে।
অপরদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার ডিআইজি মিজানকে এ মামলায়ও গ্রেপ্তার করা হয়।
তাসনিয়া রহমান