সেনাবাহিনীর সদস্য থেকে যেভাবে দিগ্বিজয়ী হলেন জাগালো
১৯৫০ সালে মারকানা ট্রাজ্যেডির সময় সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মারিও জাগালো। ব্রাজিলের অবিশ্বাস্য হারে দায়িত্বরত থাকার কারণে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি গড়নের ছোটখাটো মানুষটির ভিতরের যে একটা ক্ষত তৈরি হয়েছিলো, সেদিন তা প্রকাশ করতে পারেননি। তবে হারের নিস্তব্ধতা, দুঃখ ও হতাশা নিয়ে মনে মনে ভিন্ন একটি গল্প লেখা শুরু করেছিলেন।
সেই গল্পে ৮ বছরের মধ্যে মারাকানা ট্রাজ্যাডির অন্য রূপ দেখে ব্রাজিল ফুটবল। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়কদের একজন হয়ে শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন জাগালো।
ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপ জিতেই গল্পটার শেষ করেননি জাগালো। কেননা যার জন্মই হয়েছে কেবল জেতার জন্য, তাঁর জন্য সেটা ছিল কেবলই শুরু।
১৯৫৮ সালের পর ১৯৬২ বিশ্বকাপও জিতেন জাগালো। ১৯৬৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেকে বুট জোড়া তুলে রাখেন। দুটি বিশ্বকাপ জেতা একজন কিংবদন্তি লেফট উইঙ্গারের গল্পটা শেষ হতে পারত সেখানেই।
তবে একজন দিগ্বিজয়ীর গল্প এতো অল্পতেই ফুরিয়ে যাবার নয়। জাগালোর আগমন ঘটে হন একজন ‘মাস্টার ট্যাকটিশিয়ান’ হয়ে। যা তাকে এনে দেয় ‘দ্য প্রফেসর’ খেতাবও।
৭০ বিশ্বকাপে মাত্র ৩৮ বছর বয়সেই কোচ হিসেবে ব্রাজিল ডাগ আউটে দাঁড়ান জাগালো। পেলে, রিভেলিনো, কার্লোস আলবার্তোদের নিয়ে গড়া সেই ব্রাজিলকে নিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ জিতেন কোচ হয়ে।
ব্রাজিলের তিন বিশ্বকাপের পাশেই সরাসরি নিজের নাম জড়ানো জাগালো অবদান ছিলো চতুর্থ বিশ্বকাপেও। ১৯৯৪ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে ব্রাজিল জাতীয় দলের টেকনিক্যাল পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। কোচ কার্লোস আলবার্তো পেরেইরার সঙ্গে জুটি বেঁধে সেবার ব্রাজিলের চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়ে রাখেন দারুণ অবদান।
কোন কোন সংবাদ মাধ্যমের মতে ২০০২ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী দলটির উপদেষ্টা হিসেবেও ছিলেন জাগালো। যেখানে পুসকাস, ইউসেবিও কিংবা ক্রুইফদের মতো কিংবদন্তিরা একটি বিশ্বকাপ না পাওয়ার হতাশা নিয়ে ফুটবলে নিজেদের এপিটাফ লিখেছেন, সেখানে ব্রাজিলের ৫ টি বিশ্বকাপ ট্রফি সাক্ষী দেয় জাগালোর শ্রেষ্ঠত্বের।
জাগালোকে অনেকে ‘দ্য উলফ’ বা ‘বুড়ো নেকড়ে’ হিসেবেও ডাকতেন। তবে এমন নাম হওয়ার কারণ তার ডাকনাম ছিলো ‘লোবো’। পর্তুগিজ ভাষায় যার ইংরেজি অর্থ উলফ বা নেকড়ে।
তবে ডাকনামের অর্থ বাদ দিলেও খেলার এবং কোচিং জীবনে একজন নেকড়ের মতো যে তিনি শিকারি ছিলেন তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
কাতার বিশ্বকাপের পর চলে গিয়েছিলেন ফুটবলের মহারাজা পেলে। এবার পৃথিবীকে বিদায় জানালেন ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী দলের শেষ সদস্য জাগালো। যেন ব্রাজিল ফুটবল বলছে অতীতের ভাণ্ডার এবার শেষ হলো। এখান থেকেই বুনতে হবে নতুন স্বপ্নের জাল। অনুপ্রেরণা হয়ে থাকা পেলে-জাগালোদের স্মৃতি নিয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া ব্রাজিল ফুটবল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তো?