নাকানি-চুবানি খেলেন যেসব হেভিওয়েট প্রার্থী
বেশকিছু হেভিওয়েটপ্রার্থীরা এবার মুখ থুবরে পরেছে ভোটের মাঠে। আওয়ামী লীগ ও তাদের শরীক দলের বড় নেতা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী মন্ত্রীদের অনেকেই এবার সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এসব হেভিওয়েটদের বেশির ভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন। পরাজিত হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের তিন প্রতিমন্ত্রী, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ আরও অনেকে।
আওয়ামী লীগের শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকায় উঠলেও তা পারে নিতে পারেননি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী। কুষ্টিয়া-২ আসনের টানা তিনবারের এমপি ইনু এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের কাছে হেরেছেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি গাজীপুর-৫ আসন থেকে নৌকা নিয়ে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামানের কাছে পরাজিত হয়েছেন।
ফরিদপুর-৩ আসনে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের কাছে পরাজিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী শামীম হক।
মানিকগঞ্জ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর ট্রাকে বিধ্বস্ত হয়েছেন তিনবারের এমপি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। ৬ হাজার ২৫৬ ভোটের ব্যবধানে ট্রাকের কাছে হেরে যান মমতাজ।
নেত্রকোণা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে খ্যাত অসীম কুমার উকিলও সংসদে যাওয়ার টিকিট পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী ইফতিখার উদ্দিনের ট্রাক প্রতিকের কাছে ২ হাজার ২৫৩ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন তিনি।
মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাশ।
মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুস সোবহান গোলাপ হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের ঈগলের কাছে। ৩৪ হাজার ৬৬২ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন তিনি।
এবারও ফরিদপুর-৪ আসন থেকে নৌকা পেয়েও আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহ জয় পাননি। ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরীর কাছে হেরেছেন তিনি। টানা তিনবার নৌকা প্রতীক পেয়েও জয় পাননি তিনি। ২৩ হাজার ৯৬৯ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন বর্ষিয়ান এই নেতা।
সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে হারিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রার্থী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ১৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন নাহিদ।
নাহিদ পেয়েছেন ৫৮ হাজার ১২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৩৮৭ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৫৮ ভোট।
হবিগঞ্জ-৪ আসনের ভোটে নৌকার প্রার্থী বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের ঈগলের আঘাতে ভূপাতিত হয়েছেন। দেড় লাখ ভোটের বেশি ব্যবধানে মাহবুব আলী পরাজিত হন।
আরেক প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ঢাকা-১৯ আসনে নৌকার বিজয় এনে দিতে পারেননি। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের সাইফুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন।
এছাড়া ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের কেটলি মার্কার প্রার্থী ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী সিআইপির কাছে হেরেছেন।
২১৭টি কেন্দ্রের ফলাফলের মধ্যে কেটলি প্রতীকে মো. খসরু চৌধুরী পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৮৫ ভোট। ঢাকার এই আসনটিতে নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে যশোর-৫ আসনে নৌকার আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যও পরাজিত হয়েছেন। তিনি সাড়ে চার হাজার ভোটের ব্যবধান জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলীর কাছে পরাজিত হন।
পিরোজপুর-২ আসন থেকে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে হেরে গেছেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি ২৯ হাজার ৭ ভোটের ব্যবধানে তার সাবেক এপিএস স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে হেরে যান। এদিকে রাজশাহী দুই আসনে নতুন বাদশার আগমন ঘটেছে। ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশাকে হারিয়ে সংসদে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র শফিকুর রহমান বাদশা।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে নির্বাচনী দৌড়ে হেরেছেন যশোর-৬ আসনের নৌকার প্রার্থী শাহীন চাকলাদার। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী কৃষকলীগ নেতা আজিজুল ইসলামের ঈগলের কাছে পরাজিত হয়েছেন।
রংপুর-৫ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাশেক রহমান বিশাল ব্যবধানে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকারের কাছে হেরে গেছেন।
বরগুনা-১ আসনের নৌকার পাঁচবারের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবার তৃতীয় হয়েছেন। এই আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকু।
তৈমূর আলম খন্দকার নারায়নগঞ্জ-১ আসন থেকে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
এদিকে টাঙ্গাইল-৮ আসনে পরাজিত হয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। আর রংপুর এক আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে হেরেছেন মশিউর রহমান রাঙ্গা।
অনুপম শাহজাহান জয় পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪০১ ভোটে। গামছা প্রতীক নিয়ে ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট পেয়েছেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ পুরুষ, আর ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ নারী। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২।