আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

যৌতুকের জন্য মরিচের গুঁড়া ডলে নির্যাতন!

সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পরেছে সিনেমা স্টাইলের একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যাচ্ছে, হাত-পা বাঁধা এক নারী পুকুরের পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন আর অপর এক নারী বলছেন, ক্যামেরা রেডি, অ্যাকশন। পুকুরের পানি থেকে ঘাটে উঠলেই এক যুবক বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বাড়ি দিচ্ছেন ওই নারীর শরীরে।

ছড়িয়ে পরা ভিডিও সম্পর্কে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর নাম শিউলি আক্তার (১৯)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ ইউনিয়নের চরশিহারি গ্রামের রিকশাচালক সাইদুল ইসলামের মেয়ে।

গেলো শুক্রবার (১৩ মে) নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটে নেত্রকোনা সদর উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ঝগড়াকান্দা গ্রামে। পরদিন শনিবার (১৪ মে) নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে তার বাবার বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জে ফেলে রেখে যাওয়ার সময় গৃহবধূর চিৎকারে স্থানীয়রা স্বামী রাজন মিয়া ওরফে রফিকুল ইসলামকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

এ ঘটনার পর গেলো রোববার (১৫ মে) দুপুরে নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধূ শিউলি আক্তার বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আটক রফিকুল ইসলামকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

রাজন মিয়া ওরফে রফিকুল ইসলাম নেত্রকোনা সদর উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ঝগড়াকান্দা গ্রামের মৃত লালচান মিয়ার ছেলে।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল হক মুন্না গণমাধ্যমকে বলেন, মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তারকৃত রফিকুল ইসলামকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।

মামলার এজাহার ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পারিবারিকভাবে শিউলি আক্তারের সঙ্গে রফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেয়া হলেও রমজানের আগে থেকে আবারও যৌতুক চেয়ে শিউলির ওপর নির্যাতন শুরু করেন রাজন। শিউলির বাবা একটি মোবাইল কিনে দেন রাজনকে। এরপর ২০ হাজার টাকা ও ঘরের আসবাবপত্র যৌতুক হিসেবে চাইলে তা দিতে অস্বীকার করেন শিউলি। এরপরই শুরু হয় শিউলির ওপর নির্যাতন।

ঘটনার দিন শুক্রবার (১৩ মে) শিউলি আক্তারের স্বামী রাজন, শাশুড়ি জরিনা খাতুন ও জা রুমা আক্তার মিলে মারধর করেন। একপর্যায়ে শিউলির হাত-পা বেঁধে মারধর শেষে শরীরে মরিচের গুঁড়া ডলে দেন। এ সময় পানি খেতে চাইলে মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পানি দেয়া হয় শিউলিকে। পানি খেয়ে যন্ত্রণায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে বাড়ির পাশে পুকুরের পানিতে পড়ে যান তিনি। ওই সময় ভিডিও ধারণ করা হয়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিউলি আক্তার বলেন, তাকে বেধড়ক মারধর করার পর, হাত-পা বেঁধে রাখা হয়। পানি চাইলে মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পানি দেয়া হয়। পরে যন্ত্রণায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে বাড়ির পাশে পুকুরের পানিতে পরে যান। পানি থেকে উঠতে চাইলে তার স্বামী তাকে আবারও মারধর করে। পরে সেই মারধরের ভিডিও শিউলির জা রুমা আক্তার তার ফোনে ধারণ করেন। 

স্বামীসহ সকল নির্যাতনকারীরই বিচারের দাবি করেছেন ভুক্তভোগী শিউলি।

অনন্যা চৈতী

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন