২৬৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘হুম গুটি’ খেলা দেখতে লাখো জনতা
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার ঢাকঢোল বাজিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ২৬৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘হুম গুটি’ খেলা। জনশ্রুতি আছে এই খেলায় নির্দিষ্ট কোনো সময় ও খেলোয়াড়ের সংখ্যা নেই। নেই কোনো পরিচালক।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে দলবেঁধে শত শত খেলোয়াড় খেলার কেন্দ্রস্থল তেলিগ্রাম বড়ইআটা গ্রামে আসেন। খেলা দেখতে আসেন লাখ লাখ মানুষ। সন্ধ্যায় হাজারো খেলোয়াড়ের খেলা দেখতে মানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলে এ খেলা।
এর আগে ওই দিন দুপুরে ঐতিহ্যবাহী হুম গুটি খেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল মালেক সরকার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্তা, ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুজ্জামান রাশেদ, ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদা ইয়াসমিন নিশী, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুর রহমান রবি ও আওয়ামী লীগ নেতা এজিদুল প্রমুখ।
উদ্বোধন শেষে প্রায় ৪০ কেজি ওজনের হুম গুটি মুক্তাগাছা জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী ও বৈলরের জমিদার হেম চন্দ্র রায়ের সীমানা তেলিগ্রাম বড়ইআটা গ্রামে ধানের পতিত জমিতে হাজার হাজার খেলোয়াড়দের মাঝে ছেড়ে দিলে কাড়াকাড়ি শুরু হয়। খেলোয়াড়রা পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ চার ভাগে বিভক্ত হয়ে খেলতে শুরু করেন।
সকাল থেকে জেলার ফুলবাড়ীয়া, মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ঢাকঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের তালে শত শত খেলোয়াড়রা আসেন।
এদিন খেলাকে কেন্দ্র করে পৌষ মেলা বসে তেলিগ্রাম বড়ইআটা গ্রামে। গ্রামে গ্রামে চলে উৎসবের আমেজ। দেওখোলা, তেলিগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, বড়ইহাটা, ভাটিপাড়া, বালাশ্বর, শুভরিয়া, কালিবাজাইল, দশমাইল, কুকরাইল, কাটাখালি, মোহাম্মদনগরসহ আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের মিলন মেলা হয়।
মুক্তাগাছা জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী ও বৈলরের জমিদার হেম চন্দ্র রায় জমি পরিমাপের বিরোধ সমাধানে তাদের প্রজাদের মধ্যে কৌশল ও শক্তির খেলা ‘হুম গুটি’র আয়োজন করেছিলেন। খেলার শর্ত ছিল যে জমিদারের প্রজারা ‘হুম গুটি’ নিতে পারবেন সেই জমিদারের জমির পরিমাপ হবে সাড়ে ৬ শতাংশে এক কাঠা। পরাজিত জমিদারের এলাকার জমির পরিমাপ হবে ১০ শতাংশে এক কাঠা।
জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর প্রজারা খেলায় বিজয়ী হন। এরপর থেকে জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর ‘পরগনা’ এলাকায় জমির পরিমাপ হয় সাড়ে ৬ শতাংশে এক কাঠা। জমিদার হেম চন্দ্র রায়ের এলাকার ‘তালুক’ জমির পরিমাপ হয় ১০ শতাংশে এক কাঠা।
হুম গুটি স্মৃতি সংসদের পরিচালক এবি সিদ্দিক বলেন, হুম গুটি খেলার মাধ্যমে দুই জমিদারের জমির পরিমাপ বিরোধ সমাধান হয়েছিল। পূর্ব পুরুষরা প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ দিনে এই খেলাটি আয়োজন করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা যুগ যুগ ধরে খেলাটির আয়োজন করে আসছি।
হুম গুটি খেলায় নির্দিষ্ট কোনো সময় ও খেলোয়াড়ের সংখ্যা নেই বা কোনো পরিচালক নেই। খেলাটি ২৬৫ বছর ধরে চলছে বলে দাবি করেন তিনি।
সংসদ সদস্য মো. আ. মালেক সরকার বলেন, আমি এ খেলা সংসদে উপস্থাপন করব। হুমগুটি খেলাটি যেন জাতীয় খেলা হয়।