আর্কাইভ থেকে এশিয়া

শ্রীলঙ্কায় নিষিদ্ধ হচ্ছে বোরকা, বন্ধ হচ্ছে মাদ্রাসা

নিরাপত্তার স্বার্থে বোরকাসহ মুখ ঢাকা সব ধরনের পোশাক নিষিদ্ধ করছে শ্রীলঙ্কা সরকার। গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান শ্রীলঙ্কার জননিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী শরৎ বীরাসেকেরা। এর আগের দিন মন্ত্রিসভার আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। তবে এখন প্রয়োজন সংসদীয় অনুমোদন। এই নিষেধাজ্ঞা খুব শিগগিরই কার্যকর হবে বলে আশা করছে কর্মকর্তারা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও কাতারভিত্তিক আলজাজিরা জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করেন জননিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী বীরাসেকেরা। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বোরকা ধর্মীয় উগ্রবাদের অন্যতম প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের ছোটবেলায় মুসিলম নারী ও কিশোরীরা কখনই বোরকা পরতো না। এখন এটা বেড়েছে। আমরা অবশ্যই এটা নিষিদ্ধ করব।

জননিরাপত্তা মন্ত্রী বীরাসেকারা আরো বলেন, বোরকা পরিধান ধর্মীয় উগ্রবাদের একটি লক্ষণ ছিল যা বর্তমানেও পরতে দেখা যাচ্ছে। এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকির কারণ। এজন্য স্থায়ীভাবে বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমি এই নির্দেশে স্বাক্ষর করেছি এবং শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন করা হবে।

মাদ্রাসা বন্ধের বিষয়ে মন্ত্রী জানান, দেশজুড়ে চলমান এক হাজারের বেশি মাদ্রাসা গুটিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। জাতীয় শিক্ষা নীতি লঙ্ঘন করছে মাদ্রাসাগুলো। জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এসব প্রতিষ্ঠান চালাতে দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, যে কেউ স্কুল খুলে শিশুদের যা খুশি পড়াতে পারবে না। সরকারের শিক্ষা নীতি মেনে সব স্কুলে পড়াশোনা করাতে হবে। বেশিরভাগ অনিবন্ধিত স্কুলে শুধু আরবি ও কোরআন পড়ানো হয় যা খুবই খারাপ।

এসব প্রসঙ্গে শ্রীলঙ্কার মুসলিম কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহমেদ বলেছেন, কর্মকর্তারা বোরকা পরা কারও পরিরচয় জানতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে তাহলে তাদের মুখ দেখাতে বললে কেউ আপত্তি জানাবে না।

হিলমি আহমেদ আরও বলেন, ধর্ম বিশ্বাস যাই হোক, মুখ ঢাকার জন্য পোশাক পরার অধিকার সবার আছে। অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে হবে, শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে হবে না।

মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসঙ্গে হিলমি দাবি করেন, দেশটির বেশিরভাগ মুসলিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে নিবন্ধিত। হয়তো মাত্র পাঁচ শতাংশ সরকারের শিক্ষা নীতি মেনে চলছে না এবং তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

 ২০১৯ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ইস্টার সানডের দিন গির্জা ও হোটেলে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর এমন সিদ্ধান্ত জন্য পদক্ষেপ নেয় দেশটির সরকার। ক্যাথলিকদের গির্জা ও পর্যটক হোটেলগুলোকে তাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল হামলাকারীরা। হামলায় প্রাণ হারায় ২৫০ জনের বেশি।

এরপর থেকে জঙ্গিদের ধরার জন্য অভিযানে নামে শ্রীলঙ্কার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাৎক্ষণিক মুখ ঢাকার জন্য ব্যবহৃত পোশাক পরিধানের ওপর সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এখন এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে চালু করছে দেশটির সরকার।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন