আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

লজ্জার হার কিংসদের

প্রথম মিনিট থেকেই আধিপত্যের ইঙ্গিত ছিলো বসুন্ধরা কিংসের। বক্সের ওপরে দারুণ সুযোগ ছিল মিগেল ফিগেইরার। বাইরে মেরে সুযোগ নষ্ট করলেন এবং এর পর থেকেই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হতে থাকে যুবভারতী স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামের ওপর থেকে টিন উড়ে এসে পড়ে মাঠে, বিলবোর্ডগুলো খরকুটোর মতো উড়তে থাকে। সঙ্গে বজ পাতসহ বৃষ্টি শুরু হলে খেলা চলে মাত্র ১১ মিনিট। ৫১ মিনিট পর আবার খেলা শুরু হয়, কিন্তু ওই ঝড়ই সবুজ-মেরুনের সব দুর্ভাগ্য উড়িয়ে নেয় এবং বাগান হয়ে ওঠে গোলে গোলে সুশোভিত।

এএফসি কাপে শনিবার (২১ মে) ভারতের কলকাতার সল্টলেক যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তাদের এই স্কোর লাইনে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে টিকে থাকলো মোহনবাগান। প্রথম ম্যাচে তারা ২-৪ গোলে হেরেছিলো গোকুলাম কেরালার কাছে।

এএফসি কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দারুণ জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে লজ্জার হার বসুন্ধরা কিংসের। ম্যাচ শুরু মাত্র ২০ মিনিটেই ২-০ গোলে এগিয়ে যেতে পারতো বসুন্ধরা কিংস। অথচ ৩৪ মিনিটে দেখা গেল বাংলাদেশি ক্লাবটির জালে মোহনবাগানের ২ গোল। ম্যাচ শেষে তারা পিছিয়ে ৪-০তে।

এদিকে এই হারে গভীর শঙ্কায় পড়েছে অস্কার ব্রুজনের দলের ইন্টারজোন প্লে-অফ সেমিফাইনালে খেলা। শেষ চারে খেলতে হলে মঙ্গলবার (২৪ মে) জিততে হবে ভারতের অপর দল গোকুলাম কেরালার বিপক্ষে। সেই সঙ্গে নানা হিসাবের অপেক্ষায় থাকতে হবে।

কলকাতার এক ঝড়ই যেন সব দুর্ভাগ্য উড়িয়ে নিয়ে গেছে এটিকে মোহনবাগানের। ঝড় থামল আর দুটি গোল থেকে তাদের বাঁচিয়ে দিল পোস্ট। এরপর সবুজ-মেরুনের গোলবন্যায় ভেসে গেল বসুন্ধরা কিংস। এক এক করে চার গোল হজম করে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা হেরেছে মোহনবাগানের কাছে। লিস্টন কোলাসোর হ্যাটট্রিকে ৪-০ গোলের এই হার তাদের এএফসি কাপের পথটাই অনেক কঠিন করে দিয়েছে।

অথচ প্রথম মিনিট থেকেই আধিপত্যের ইঙ্গিত ছিলো বসুন্ধরা কিংসের। বক্সের ওপরে দারুণ সুযোগ ছিলো মিগেল ফিগেইরার। বাইরে মেরে সুযোগ নষ্ট করলেন এবং এর পর থেকেই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হতে থাকে যুবভারতী স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামের ওপর থেকে টিন উড়ে এসে পড়ে মাঠে, বিলবোর্ডগুলো খরকুটোর মতো উড়তে থাকে। সঙ্গে বজ পাতসহ বৃষ্টি শুরু হলে খেলা চলে মাত্র ১১ মিনিট। ৫১ মিনিট পর আবারো খেলা শুরু হয়, কিন্তু ওই ঝড়ই সবুজ-মেরুনের সব দুর্ভাগ্য উড়িয়ে নেয় এবং বাগান হয়ে ওঠে গোলে গোলে সুশোভিত।

তাদের সৌভাগ্য মানে বড় দুর্ভাগা বসুন্ধরা কিংস। নইলে খেলা শুরুর পর দু-দুটি শট ঠেকিয়ে দেয় গোলপোস্ট। ১৮ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান রবসন রোবিনহোর ফ্রি-কিক ফেরে পোস্টে লেগে। দুই মিনিট বাদে ডান দিক থেকে রিমনের বাঁ পায়ের চমৎকার ভলিটি গিয়ে ঠেকে পোস্টে। 

দুটির একটি গোলে পরিণত হলেই বদলে যায় খেলার চেহারা। কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোনও ম্যাচ শেষে তাই বলেছেন, ‘প্রথম ২৫ মিনিটে আমরা তিনটি সুযোগ পেয়েছিলাম, এর একটি গোল হয়ে গেলে ম্যাচটি অন্য রকম হতো। ’

ম্যাচের আগেও এই স্প্যানিশ কোচ প্রথম ৩০ মিনিট খুব সতর্ক হয়ে প্রতিপক্ষকে সুযোগ না দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর শিষ্যরা সেটা করতে পারেননি।

সেটা যেন হওয়ারও ছিলো না, ওই ঝড় যে ভাগ্যলক্ষ্মী ফিরিয়ে এনেছে মোহনবাগানে। সেটা আরো স্পষ্ট হয় ২৪ মিনিটে বিশ্বনাথের শিশুসুলভ ডিফেন্ডিং দেখে। একটি নিরীহ বল, সেটি ক্লিয়ার করতে গিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে বলে-পায়ে করতে পারেননি। 

সেটি অনায়াসে জালে জড়িয়ে দিয়ে লিস্টন কোলাসো এগিয়ে নেন স্বাগতিকদের। ৩৪ মিনিটের গোলটি কিংস রক্ষণের সামগ্রিক ব্যর্থতা। ব্যাকলাইনের অনেক ওপরে উঠে এসে কাওকোর থ্রু বলের সঙ্গে আর তাল মেলাতে পারেননি ইরানি ডিফেন্ডার খালিদ শাফি। 

সুবাদে ওই ভারতীয় তরুণ কোলাসোর দ্বিতীয় গোলে ম্যাচটি কঠিন হয়ে যায় কিংসের জন্য। কঠিন তবে একদম হাতের বাইরে চলে যায়নি তখনো।

বিরতির পর ৪৫ মিনিট অনেক সময়। ম্যাচে ফেরার বিশ্বাস নিয়ে মাঠে ফিরলে কিংসের গল্প হতো অন্য রকম। সেটা হয়নি, কারণ দ্বিতীয়ার্ধেও দুই গোলের শোক-তাপ কাটিয়ে ওঠার মতো মনোবল দেখা যায়নি তাদের খেলায়। উল্টো অব্যাহত থাকে ভুলের মিছিল। ৫৩ মিনিটে খালিদ শাফি কর্নার এড়াতে গিয়ে বল তুলে দেন মানভীরের পায়ে। 

তাঁর স্কয়ার পাসে লিস্টন কোলাসো হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। এরপর মতিন মিয়া ও ইব্রাহিমকে নামিয়েও কোনো গোল ফেরত দিতে পারেনি কিংস। কিন্তু প্রতিপক্ষে বদলি হয়ে নেমে ডেভিড উইলিয়ামস করেন আরেক গোল। 

মাজিয়া স্পোর্টসকে হারিয়ে শুরু করা বসুন্ধরা কিংস পথ হারিয়ে ফেলেছে দ্বিতীয় ম্যাচে। তাদের স্বপ্নের সমাধি হয়ে গেছে মোহনবাগানের ম্যাচে। তিনটি এএফসি কাপে আগের চার ম্যাচে অপরাজিত দলটি কাল প্রথম হেরেছে এবং এই হারের যন্ত্রণা অনেক বেশি। চার গোলের তোপে সব গৌরব ভাসিয়ে দেওয়া এক হার।

হাসিব মোহাম্মদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন