মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হুমকির কারণ জানাল র্যাব
রাজধানীতে আলোচিত গরুর মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকিদাতা ও নির্দেশদাতাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ঢাকার আশুলিয়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নুরুল হক (৬৭) ও তার অন্যতম সহযোগী মোহাম্মদ ইমন (২২)। তাদেরকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে হুমকি দেয়ার নেপথ্যের কারণ।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, আশুলিয়া এলাকায় ডিশ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের সঙ্গে মারামারি হয়। এ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধও চলছিল। কোনো এক ব্যক্তি গ্রেপ্তারকৃত নুরুল হককে প্রলোভন দেখান। তার কথামতো দেয়া একটি মোবাইল ফোনে নুরুল হুমকি দেন। কিন্তু তিনি নাকি জানতেন না সেই ব্যক্তি মাংস বিক্রেতা খলিল।
গেলো ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর শাহাজাহানপুরের আলোচিত মাংস ব্যবাসয়ী খলিলুর রহমানের মোবাইল ফোনে অপর একটি মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে ও তার ছেলেকে দুই দিনের মধ্যে গুলি করে হত্যার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করা হয়। এছাড়াও খলিল এবং তার ছেলেকে হত্যা করার জন্য গুলি ও পিস্তল রেডি করা হয়েছে জানিয়ে তার মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা এবং মাথা ছাড়া লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে মাংস ব্যবসায়ী খলিল রাজধানীর শাহাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেই জিডির সূত্র ধরে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা যা জানিয়েছে
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়া থানার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় ডিস ও ইন্টারনেট লাইনের ব্যবসার করে আসছেন। স্থানীয় এলাকায় তার প্রায় ৫শ ডিস এবং ইন্টারনেট লাইনের সংযোগ রয়েছে। এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের সাথে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ ছিল। বিরোধের জেরে কিছুদিন পূর্বে তার প্রতিপক্ষের সাথে মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় তার ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। পরে একজন তাকে আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার প্রদান করে তাকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দিতে বলে। যার বিনিময়ে সে তার স্থানীয় এলাকায় ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায় কোনো প্রতিবন্ধকতা বা কোনো বাধার সম্মুখিন হবে না।
তিনি বলেন, ব্যবসায়িক সুবিধা পাওয়ার আশায় নুরুল হক গেলো ১৮ জানুয়ারি মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে হত্যার হুমকি দেন। নুরুল হক মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকির সময় চাঁদা দাবির পাশাপাশি তার ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ সেলিমের নাম উল্লেখ করেন। একই দিনে নুরুল হক গ্রেফতার ইমনকে একটি ফোন ধরিয়ে মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে গালাগালি করতে বলে। ইমন নুরুলের কথামতো খলিলকে ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকে এবং তাকে দুই দিনের মধ্যে হত্যা করবে বলে গুলি ও পিস্তল রেডি করে রেখেছে বলে জানায়। এছাড়াও ইমন খলিলের মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা এবং মাথা কাটা লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। হুমকি দিয়ে মোবাইল ও সিম কার্ডটি পানিতে ফেলে দেয় ইমন।
হুমকিদাতাদের পরিচয়
নুরুল হক ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় বসবাস করেন। তিনি ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী পাশাপাশি কৃষি কাজ করতেন। নুরুল হক এলাকায় বিভিন্ন জনকে হুমকির মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন ধরণের অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে। নুরুলের নামে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানায় হত্যার হুমকি, চাঁদাবাজি এবং মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪টির অধিক মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে ইমন দীর্ঘদিন ধরে নুরুলের ডিসের ব্যবসার কাজে সহায়তা করতেন। এছাড়াও তিনি নুরুলের সাথে এলাকায় বিভিন্ন জনকে হুমকি প্রদানের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন ধরণের অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে। এছাড়াও তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন।
তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় র্যাব।