আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ : ক্লাব ফুটবলের দুই হেভিওয়েটের যুদ্ধ

হেঁটে চলার এই পথের শেষ হাসিটা হাসবে কে? কে হবে চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন?  লাল-সাদা রঙের আভাতে সাজা, ইউরোপীয়ানরা ভাগ হয়েছে দুটো ভাগে। অলরেডদের নিয়ে ইংলিশরা, আর গ্যালাক্টিকোদের সাথে স্প্যানিশরা। কারণ প্যারিসের স্তাদে দি ফ্রান্স স্টেডিয়ামে, লম্বা ঘোড়ার রেসের কে দেখবে শেষটা, মোহাম্মদ সালাহ নাকি কারিম বেনজেমা? আজ শনিবার (২৮ মে) শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে লিভারপুল-রিয়াল মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে পিএসজি বিদায় নিলেও টিকে আছে প্যারিসের নাম। ইউরোপ সেরার স্বাক্ষী হতে চলেছেন ফরাসিবাসী।

নিজেদের ১৪তম শিরোপার লক্ষ্যে এদিন মাঠে নামবে রিয়াল। আর লিভারপুলের লক্ষ্য থাকবে রিয়ালকে পাশ কাটিয়ে, নিজেদের সপ্তম শিরোপা ঘরে তোলার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল দেখার অপেক্ষায় গোটা ফুটবল বিশ্ব। 
তবে ফাইনাল দেখার উত্তেজনায় সবচেয়ে এগিয়ে ব্রাজিলিয়নরা। কারণ মর্যাদার এই লড়াইয়ে দুই দলের হয়ে খেলবে অন্তত আটজন ব্রাজিলিয়ান । 

লড়াইটা দু’দলের দুই মাস্টার মাইন্ডেরও। যেখানে রোল মডেল কার্লোস আনচেলত্তি থেকে প্রায় সব বিচারে পিছিয়ে ইয়ুর্গেন ক্লপ। স্তাদ দা ফ্রান্সে স্পটলাইটে থাকবেন আরো দুজন। কারিম বেনজেমা ও মোহাম্মদ সালাহ। ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপার পাশাপাশি এ ম্যাচ নির্ধারণ করে দিতে পারে এবারের ব্যালন ডি অরের’ও।

ধারণা করা হচ্ছে, শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি যে একাদশ গঠন করবেন, তাদের মধ্যে থাকবেন পাঁচ ব্রাজিলিয়ান। তারা হলেন, এডার মিলিতাও, মার্সেলো, ক্যাসেমিরো, ভিনিসিয়াস জুনিয়র এবং রদ্রিগো।
ক্লাব পর্যায়ের এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে এতোগুলো ব্রাজিলিয়ান থাকায়, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আমেজ উইরোপ থেকে ঠাঁই করে নিয়েছে ল্যাতিন আমেরিকায়।  

দুই দলের লড়াইয়ে ডাগআউট রাঙাতে প্রস্তুত দুই কোচ কার্লো আনচেলত্তি ও ইয়ুর্গেন ক্লপ। অভিন্ন লক্ষ্য কৌশলের সেরা প্রয়োগের অপেক্ষায় দুই ট্যাকটিশিয়ান। আনচেলত্তিকে রোল মডেল মানতেই পারেন ক্লপ। তবে মাঠে ছাড় নয় একবিন্দুও।

১১ বারের মতো একে অপরের মুখোমুখি দু'কোচ। পরিসংখ্যানে একটু এগিয়ে আনচেলত্তি। ড্র ও হার সমান ৩টি করে, জিতেছেন ৪ ম্যাচ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও পিছিয়ে য়্যুর্গেন ক্লপ ৬ বারের দেখায় ২ জয়ের বিপরীত হার ৩টিতে।

তবে অনন্য এক রেকর্ডের সামনে দাড়িয়ে কার্লো আনচেলত্তি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ ৫ বার ফাইনাল খেলছেন রিয়াল বস। আর প্রথম কোচ হিসেবে হাতছানি চার শিরোপা জয়ের। জিনেদিন জিদান ও বব পেইজলি জিতেছেন ইতালিয়ান ট্যাকটিশিয়ানের সমান তিনটি করে ট্রফি।

এই ম্যাচে সেলেসাওরা রাজত্ব করতে পারলেও, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার নেই কোনো খেলোয়াড়, দুই ফাইনালিষ্ট রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা লিভারপুলে। বিষয়টা যতোটা বিস্ময়কর ঠিক তেমনি আবার আশ্চর্যজনকও। কেননা ফাইনালিস্ট দুই দলের এক দলেও নেই আলবিসেলেস্তার কোনো খেলোয়াড়। 

অলরেড কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের একাদশেও তিন ব্রাজিলিয়ান ঠাই পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। লিভারপুলের একাদশে গোলরক্ষক অ্যালিসন, মিডফিল্ডার ফ্যাবিনহো এবং স্ট্রাইকার ফিরমিনো দেখা যাওয়ার সম্ভবনাই বেশি। কারণ এই তিনজনকে ছাড়া ক্লপ সাহেবতো সেরা একাদশ, কল্পনাই করতে পারেন না।

অন্যদিকে, কার্লো আনচেলত্তির একাদশে থাকতে পারেন পাঁচ ব্রাজিলিয়ান। এডার মিলিতাও, মার্সেলো, ক্যাসেমিরো, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এবং রদ্রিগো। 

মার্সেলো এবং ক্যাসেমিরো হলেন মিডফিল্ডের প্রাণ, আর আক্রমণভাগে বেনজেমার সঙ্গে সমানতালেই লড়াই করে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এবং রদ্রিগো। ম্যানসিটির বিপক্ষে রদ্রিগোর জোড়া গোলেই ফাইনালের টিকিট কেটেছে রিয়াল। আর মিলিতাওকে ছাড়া তো ডিফেন্স কল্পনাই করতে পারেন না মাদ্রিদ বস আনচেলত্তি।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো টুর্নামেন্টের ফাইনালে নির্দিষ্ট একটি দেশের এতগুলো ফুটবলার একসঙ্গে মাঠ কাঁপাবে, বিষয়টি বিস্ময়করই বটে।

এবার আসা যাক অন্য এক বিষয় নিয়ে, রিয়ালের জুজু! অবাক হওয়ার বিষয় হলেও সত্য। গোলের খেলা ফুটবল তাও কিনা রোমাঞ্চকর ফাইনাল বলে কথা। কিন্তু রিয়ালের জালে আগে লিভারপুলকে গোল না করার পরামর্শ দিলেন, খোদ ক্লপের বন্ধু পেপ গার্দিওলা। কারণ এটা রিয়ালের মরণ ফাঁদ।

এবারের পুরো মৌসুম জুড়ে লসবাঙ্কোরা, গুনেগুনে আটবার লিখেছে এমনই সব ড্রামাটিক ক্যামব্যাকের গল্প। প্রথমে গোল হজম, পরে ম্যাচে সমতায় ফেরাই নয়, রীতিমত রূপকথার গল্পের মতো, বিশাল জয়ে মাঠ ছাড়া।

কারিম বেনজেমা, ভিনিসিয়ুস জুনিয়রদের হ্যাটট্রিকে স্তদ্ধ হয়েছে প্রতিপক্ষরা। তাই তো ম্যান সিটির ম্যানেজার, পেপ তার বন্ধুকে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে জানিয়ে দিলেন, আগে গোল করে নয়, জাল অক্ষত রেখে স্প্যানিশ জায়ান্টদের সামলে রাখারা। 
নয়তো কিং অব ক্যামব্যাকদের বিপক্ষে অষ্টম শিরোপা জেতার আক্ষেপটা হয়তো বাড়তে পারে ইংলিশদের। 

তবে স্পেনের আন্দালুসিয়ার বেনালমাদেনা অঞ্চলে সি লাইফ অ্যাকুয়ারিয়ামে যে হলুদ কচ্ছপটি আছে, তার ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বাস করলে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের হতাশ হতে হবে।

বেশির ভাগ বড় টুর্নামেন্টেই এমন খবর পাওয়া যায়। দুই দল যখন ফাইনালের প্রস্তুতি নিচ্ছে, মাঠের বাইরে বিশ্লেষকেরাও কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত, তখন ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে এমন কোনো প্রাণী উঠে আসে আলোচনায়। 

২০১০ বিশ্বকাপে অক্টোপাস পল আলোচনায় উঠে আসার পর বেশির ভাগ বড় টুর্নামেন্টেই এমন ভবিষ্যদ্বাণী শোনা যায়। সেবার বিশ্বকাপে আট ম্যাচে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলো পল। এর মধ্যে স্পেন যে ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবে, সে ভবিষ্যদ্বাণীও সঠিকভাবে করেছিলো অক্টোপাসটি। 


হাসিব মোহাম্মদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন