আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

৭৫ বছর পর যেভাবে দেখা হলো ভাই-বোনের

পাকিস্তানি একজন নারী যিনি ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান ভাগের সময়, যা দেশভাগ বলে পরিচিত, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন, ৭৫ বছর পর তিনি তার ভারতীয় ভাইদের সাথে এই প্রথমবারের মতো মিলিত হয়েছেন।

উত্তাল ওই সময়ে মুমতাজ বিবি তার শিখ পরিবার থেকে ঘটনাক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, এবং জীবনের দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে এসে গত এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের একটি গুরদুয়ারাতে তার দুই ভাই গুরমুখ সিং ও বলদেভ সিং-এর সঙ্গে একত্রিত হন।

এই ঘটনায় উদ্বেলিত তার এক ভাই গুরমুখ সিং বলেন, আমরা যে আমাদের জীবদ্দশায় আমাদের বোনের সঙ্গে মিলিত হতে পেরেছি তাতে আমরা খুবই আনন্দিত।

দেশভাগের ফলে তাদের পিতা পালা সিং পাকিস্তান থেকে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের পাতিয়ালা জেলায় চলে যান। পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় তার স্ত্রীর মৃত্যুর পরেই তিনি ভারতে চলে যান।

বলদেভ সিং বলেন, বাবা ধারণা করেছিলেন যে স্ত্রীর সঙ্গে হয়তো তার কন্যাকেও হত্যা করা হয়েছে। এর পরে তিনি তার শ্যালিকাকে বিয়ে করেন (সে সময় পাঞ্জাব পরিবারে এটাই ছিল সামাজিক রীতি)।

কিন্তু মুমতাজ বিবি ঘটনাক্রমে পাকিস্তানের একটি মুসলিম পরিবারের হাতে চলে যান, ওই পরিবারটি তাকে দত্তক নেয় এবং তারাই তাকে পেলে-পিঠে বড় করেন।

দুই ভাই-এর জন্য তাদের বোন মুমতাজ বিবির সন্ধান পাওয়াও ছিল বেশ নাটকীয়।

খোঁজ পাওয়া গেল যেভাবে

বলদেভ সিং জানান, প্রায় দুই বছর আগে আমাদের সন্তানরা সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের বোনের খোঁজ পায়।

এবিষয়ে তিনি পাকিস্তানি এক ইউটিউবার নাসির ধিলনের সঙ্গে কথা বলেন। ইউটিউবে (ইউটিউবের ওই চ্যানেলটির নাম পাঞ্জাবি লেহার) নাসির ধিলনের একটি চ্যানেল আছে যার সাহায্যে দেশভাগের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কয়েকটি পরিবার পুনরায় একত্রিত হতে সক্ষম হয়েছে।

মুমতাজ বিবির সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য গুরমুখ সিং পাকিস্তানে তাদের পৈত্রিক নিবাস শেখুপুরা জেলার একটি গ্রামের একজন দোকানদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

 

 

গুরমুখ সিং স্বীকার করেন যে মুমতাজ বিবির পরিচয়ের ব্যাপারে প্রথম দিকে তাদের পরিবার খুব বেশি আশাবাদী ছিল না।

তিনি বলেন, সে কি অন্য কেউ হতে পারে? কিন্তু আমরা ধীরে ধীরে একটা ঘটনার সঙ্গে আরেকটা ঘটনা মেলাতে পারলাম, একের পর এক প্রমাণ পেলাম এবং সে যে আমাদের বোন সেই সত্যটা প্রতিষ্ঠিত হলো।

কোথায় দেখা হলো

তারা যেসব জায়গায় মিলিত হতে পারেন বলে তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল তার একটি ছিল শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক দেভকে যেখানে সমাহিত করা হয়েছে সেই কর্তারপুর সাহিব গুরদুয়ারা মন্দির।

এই গুরদুয়ারাটি পাকিস্তানের রাভি নদীর পারে নারোয়াল জেলায় যা ভারতের ডেরা বাবা নানকের মন্দির থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে।

এবছরের ২৪শে এপ্রিল দুই ভাই তাদের পরিবার নিয়ে কর্তারপুর সাহিব গুরদুয়ারা মন্দিরে এসে পৌঁছান এবং শেষ পর্যন্ত তাদের বোনের সঙ্গে মিলিত হন। বোন মুমতাজ বিবিও তার পরিবার নিয়ে ওই মন্দিরে হাজির হয়েছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন