একনজরে দেখে নিন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা কবে
এইচএসসি পরীক্ষার পর পরই শুরু হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতিতে যুদ্ধে। ফল প্রকাশের পর সেই প্রস্তুতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়। গেলো ২৬ নভেম্বর এইচএসসির ফল প্রকাশের পর পুরোদমে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাড়ে ১০ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেবেন গেলো বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে এইচএসসি পাস করা অসংখ্য শিক্ষার্থী। যদিও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। তবে যেখানে এ সুযোগ রয়েছে, সেখানে প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়াদের রীতিমতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে।
চলতি বছর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। তবে তুলনামূলক বড় (বেশি আসনের হিসাবে) এবং ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও ভর্তি পরীক্ষা হয়নি। ফেব্রুয়ারি ও মার্চের মধ্যে পর্যায়ক্রমে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর এপ্রিলে হবে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা।
কোথায়, কবে ভর্তি পরীক্ষা, তা নিচে উল্লেখ করা হলো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তির আবেদন শেষ হয়েছে গেলো ৫ জানুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হবে ভর্তিযুদ্ধ। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট, ১ মার্চ বিজ্ঞান ইউনিট এবং ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে চারুকলা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা (সাধারণ জ্ঞান ও অংকন)।
সব ইউনিটের পরীক্ষা বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার মোট আসন ৫ হাজার ৯৬৫টি। এর বিপরীতে চার ইউনিট মিলিয়ে মোট আবেদন জমা পড়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার দুটি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রাথমিক আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৫৬ হাজারের বেশি ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী। প্রাথমিক আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে ২৬ জানুয়ারি চূড়ান্ত আবেদন শুরু হয়েছে। প্রাথমিক আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ৭২ হাজার জনসহ বিভিন্ন কোটার আওতাভুক্ত আবেদনকারীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। তিনটি ইউনিটে পরীক্ষা হবে।
এর মধ্যে আগামী ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে সি ইউনিটের (বিজ্ঞান) পরীক্ষা, ৬ মার্চ এ ইউনিট (মানবিক) এবং ৭ মার্চ বি ইউনিটের (বাণিজ্য) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এমসিকিউ পদ্ধতির এক ঘণ্টার এ পরীক্ষায় মোট নম্বর ১০০। পাস নম্বর ৪০।
আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার কথা। আর ক্লাস শুরু হবে ১ জুলাই। কোটা বাদে ৫৯টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন ৩ হাজার ৯০৪ শিক্ষার্থী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ২২, ২৫, ২৭, ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি (সম্ভাব্য) অনুষ্ঠিত হবে বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। চূড়ান্ত তারিখ ও সময়সূচি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে। ১৪ জানুয়ারি অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রবেশপত্র ডাউনলোড শুরু হবে ১৭ ফেব্রুয়ারি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২ মার্চ এ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। এরপর ৭ মার্চ সি ইউনিট, ৮ মার্চ বি ইউনিট ও ১৬ মার্চ ডি ইউনিটের পরীক্ষা হবে। এছাড়া বি-১ ও ডি-১ উপ-ইউনিটের পরীক্ষা যথাক্রমে ৩ ও ৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
সব ইউনিটেই এমসিকিউ ১০০ নম্বরের পরীক্ষা। বাকি ২০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ থেকে যুক্ত হবে। ৪ জানুয়ারি শুরু হয়ে ইতিমধ্যে আবেদন গ্রহণ শেষ হয়েছে। এ বছর আবেদন করেছেন আড়াই লাখের বেশি শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন ৪ হাজার ৯২৬টি। বুয়েটে দুই ধাপে পরীক্ষা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষা হবে দুই ধাপে (প্রাক্-নির্বাচনী ও মূল ভর্তি পরীক্ষা)। প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষা অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা মূল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ ও জমা শুরু হয়েছে ২৫ জানুয়ারি। ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ চলবে।
প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য কারা, জানা যাবে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। আর প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষা হবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি। দুই পালায় (শিফট)। মূল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের সম্ভাব্য সময় ২৯ ফেব্রুয়ারি। ৯ মার্চ মূল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তির জন্য নির্বাচিত ও অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশের সম্ভাব্য সময় আগামী ৩১ মার্চ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসনসংখ্যা ১ হাজার ৩০৯। গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা এপ্রিলে দেশের ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুক্ত হয়ে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। আগামী ২৭ এপ্রিল ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু হবে। ৪ মে ‘বি’ ইউনিট ও ১১ মে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। গত শিক্ষাবর্ষের মতো এবারও একই যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পরীক্ষায় পাস নম্বর হবে ৩০। তবে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) এবার গুচ্ছে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। শেষ পর্যন্ত ইবি না থাকলে ২৩ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হবে। প্রকৌশল গুচ্ছে তিন বিশ্ববিদ্যালয় এবারও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তির জন্য সমন্বিতভাবে পরীক্ষা নিচ্ছে। এ তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন ৩ হাজার ২৩১টি।
অনলাইনে ২৪ জানুয়ারি আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। শেষ হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রসহ যোগ্য অংশগ্রহণকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি। প্রবেশপত্র ডাউনলোড করা যাবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। আগামী ৩ মার্চ এই তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে ১৮ মার্চ। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি ও কৃষির প্রাধান্য থাকা আটটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবার গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। এবার নতুন প্রতিষ্ঠিত কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এই গুচ্ছে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া আগের মতো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে এই গুচ্ছে। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। শিগগির সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। মেডিকেল কলেজ মেডিকেল কলেজগুলোয় এমবিবিএসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে আবেদন গ্রহণ শেষ হয়েছে। এ বছর দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ১ হাজার ৩০টি আসন বেড়েছে। ফলে সরকারি মেডিকেল কলেজে ৫ হাজার ৩৮০ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবেন। এছাড়া বেসরকারি মেডিকেলের জন্য আসন রয়েছে ৬ হাজার ৩৪৮টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর মধ্যে ৮৮২টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় জারি করা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২২ জানুয়ারি অনলাইনে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আগ্রহী প্রার্থীকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিবিষয়ক ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। প্রাথমিক আবেদন ফি বাবদ ৩৫০ টাকা আবেদন করা কলেজে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অবশ্যই জমা দিতে হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য গেলো কয়েক বছর কোনো পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। এ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে আগামী ১০ মার্চ।