দেশজুড়ে

ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গুলি ও মর্টার শেল, আতঙ্কে মানুষ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে সাত ঘণ্টা বিরতির পর আবারও গোলাগুলি হয়েছে।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল আটটা পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ চলে। এর আগে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়ার কাছাকাছি মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি ঘিরে গোলাগুলি শুরু হয়।

গেলো শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত তিনটা থেকে ঢেঁকিবনিয়ার পাশে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তুমব্রু রাইট ক্যাম্প দখলকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সঙ্গে গোলাগুলি চলে। গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত একটানা গোলাগুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ চলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প দখল করে নেয় আরকান আর্মি। এরপর গোলাগুলি বন্ধ হয়। তবে সীমান্তের ৩৪ নম্বর পিলারের কাছাকাছি ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকির দখল নিয়ে গতকাল রাত ১১টার দিকে গোলাগুলি শুরু হয়। মুহুর্মুহু গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা। এতে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দেয় ঢেঁকিবনিয়ার আশপাশের এলাকায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তুমব্রু রাইট ক্যাম্প সীমান্তচৌকিটি বাংলাদেশের লোকালয়ের একদম কাছাকাছি। ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি থেকে বাংলাদেশের লোকালয় প্রায় ৮০০ মিটার দূরে। ঢেঁকিবনিয়া ও বাংলাদেশের লোকালয়ের মাঝখানে নাফ নদী ও প্যারাবন রয়েছে। এ কারণে তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে গোলাগুলির সময় যেভাবে মানুষের বসতঘরে গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে, ঢেঁকিবনিয়ায় সেভাবে পড়েনি।

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গতকাল রাত ১১টার দিকে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি ঘিরে গোলাগুলি শুরু হয়ে রাত তিনটা পর্যন্ত একটানা গোলাগুলি চলে। এতে উখিয়ার ঘাট, পূর্ব ফাঁড়ির বিল, নলবনিয়া, আনজুমানপাড়া, বালুখালী ও দক্ষিণ বালুখালী গ্রামের মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি করেছেন। এসব এলাকার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।

আজও ঘুমধুমের সাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

সীমান্তের ওপারে হঠাৎ গোলাগুলি বেড়ে যাওয়ায় ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের কাছে পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রোববার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আজও এই সাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা বলেন, বাইশফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় ও মিশকাতুন্নবী দাখিল মাদ্রাসা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জেলা প্রশাসক, ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা করে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হবে।

তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, নিরাপত্তার অভাবে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসছে না।

গতকাল জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেছিলেন, ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত ঘেঁষে যে সড়কগুলো গেছে, সেগুলোয় ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। গণপরিবহন চলাচলও সীমিত করা হয়েছে।

আতঙ্কে ঘরে ফেরেননি বাসিন্দারা

গতকাল ভোর থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের মানুষ। হিন্দুপাড়া, কোনারপাড়া, পশ্চিমকুল, উত্তরপাড়া ও মধ্যমপাড়ার বেশির ভাগ মানুষ উখিয়া সদরসহ বিভিন্ন এলাকার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যান। তারা এখনো বাড়ি ফেরেননি।

স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, তুমরু রাইট ক্যাম্প সীমান্তচৌকিতে গোলাগুলি নেই। পরিবেশ শান্ত। তবে লোকজনের মধ্যে এখনো আতঙ্ক কাটেনি।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বিজিবি তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে আহত ১৫ জনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন