আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

সুইং সুলতানের জন্মদিন আজ

কীভাবে মনে রাখবেন তাকে? অথবা তার কথা মনে পড়লে কোন দৃশ্যটি চোখের সামনে ভেসে উঠবে সবার আগে? দুর্দান্ত গতি, ভয় জাগানিয়া বাউন্সার, অনিন্দ্যসুন্দর সুইং, অবিশ্বাস্য ইয়র্কার, নাকি চাবুকে অ্যাকশন?

ওয়াসিম আকরাম-গতি, বাউন্স, সুইং, ইয়র্কার আর অ্যাকশন; সব মিলিয়ে অনন্য এক ফাস্ট বোলার তিনি। কখনো তাকে দেখা গেছে গতিতে পরাস্ত করেছেন ব্রায়ান লারাকে। কখনো অসাধারণ বাউন্সারে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলিকে। কখনো আবার সুইং বা ইয়র্কারে হকচকিয়ে দিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকারকে।

এ সবের সমন্বয়ে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ওয়াসিম আকরাম। কী সেই উচ্চতা? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯১৬ উইকেট পেয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক এই ফাস্ট বোলার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ১৭ বছর হয়েছে, কিন্তু তার ওই ৯১৬ উইকেট এখনো পাকিস্তানের পক্ষে যে কোনো বোলারের সর্বোচ্চ শিকার।

ওয়াসিম আকরামের ক্রিকেট আকাশে আবির্ভাব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দিয়ে। সেটাও কি এক ‌'অলৌকিকভাবে'! দেশের আনাচকানাচ থেকে ক্রিকেটার তুলে আনতে পাকিস্তানব্যপী প্রতিভা অন্বেষণ শুরু করে পিসিবি।

কে আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছে, কে খেলেনি সেটা বিবেচ্য ছিলো না। কে ভালো বোলিং করতে পারে বা কে পারে ভালো ব্যাটিং-এটাই ছিলো সেই প্রতিভা অন্বেষণের মূল বিবেচ্য বিষয়। তা এই প্রতিভা অন্বেষণের জন্য ১৯৮৪ সালের শুরুর দিকে একটি ট্রায়ালের আয়োজন করা হয়েছিল লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে।

পাঞ্জাবে জন্ম নেওয়া লাহোরেরই ছেলে ওয়াসিম আকরামের কানেও পৌঁছে যায় প্রতিভা অন্বেষণের খবর। চলে আসেন গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। তার বোলিং দেখে মুগ্ধ হয়ে যান পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান জাভেদ মিঁয়াদাদ। কী গতি, কী সুইং আর বাউন্সার-এ ছেলেকে তো সুযোগ দেওয়া দরকার! সেদিন এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটের বড়ে মিঁয়া।

ওয়াসিম আকরামের সেই সুযোগ আসে সে বছরেই নভেম্বরে। নিউজিল্যান্ড সফরের পাকিস্তান দলে জায়গা হয় তার। ১৮ বছর বয়সে অভিষেক হয় পাকিস্তান দলে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে মুগ্ধতা ছড়ানো বোলিং করতে পারেননি। প্রথম ওয়ানডেতে মাত্র ৪ ওভার বোলিং করে ৩১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন আকরাম। পরের ম্যাচে বলই হাতে পাননি।

নিজের জাতটা আকরাম চিনিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। দুই টেস্টের তিন ইনিংসে বোলিং করে ১২ উইকেট নিয়েছেন সাবেক ফাস্ট বোলার। সেই যে উইকেট পাওয়া শুরু, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে অনেক উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাওয়া তার দুটি উইকেট হয়তো পাকিস্তানিরা ভুলতে পারবে না কোনো দিন।

ইংল্যান্ডের অ্যালান ল্যাম্ব ও ক্রিস লুইসকে আউট করা ওই দুটি ডেলিভারি ভুলতে পারবে না পুরো ক্রিকেট বিশ্বই। যে দুটি ডেলিভারিকে সেই সময়ের ধারাভাষ্যকাররা বলেছিলেন,  ‘সিম্পলি আনপ্লেয়েবল।’

হাসিব মোহাম্মদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন