এশিয়া

জামিন পেলেন ইমরান খান, পাকিস্তানের ক্ষমতায় কি ফিরছ্নে?

জামিন পেয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।নির্বাচনের দু’দিন পরই পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইমরানকে ১৪টি মামলায় জামিন দেওয়া হলো। পাশাপাশি ইমরান সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পিটিআইয়ের নেতা শাহ মাহমুদ কুরেশি ১৩টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনের পুরো ফলাফল ঘোষণার আগেই ইমরান খানকে জামিন দেওয়ায় পাকিস্তানের রাজনীতিতে জল্পনা শুরু হয়ে গেছে-ইমরান খান কি আবারও পাকিস্তানের ক্ষমতায় বসতে চলছেন?

গত বছরের ৯ মে দাঙ্গা সংশ্লিষ্ট ১২টি এবং সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর এবং সেনা জাদুঘরে হামলা নিয়ে আরও দুই মামলা দায়ের করা হয়েছিলো ইমরান খানের বিরুদ্ধে।

পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাওয়ালপিন্ডির সন্ত্রাসবিরোধী আদালত (এটিসি)  ওইসব মামলায় ইমরান খানকে জামিন দেওয়া হয়।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরান ও মাহমুদ কুরেশির জামিন আবেদনের শুনানি করেন এটিসির বিচারক মালিক এজাজ আসিফ। আদালত বলেছেন, ইমরানকে গ্রেপ্তার করে রাখার কোন এখতিয়ার নেই। ৯ মে দাঙ্গা সংশ্লিষ্ট মামলায় সব আসামি জামিনে রয়েছেন।

গত ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজিরা  দিতে গেলে ইমরাস খানকে গ্রেফ্তার করা হয়।  এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী  বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দলের লাখো নেতাকর্মী। বিক্ষোভ থেকে হামলা হয় সেনা স্থাপনায়। এসব দাঙ্গার ঘটনায় ইমরান খানের নামে বেশ কয়েকটি মামলা দেওয়া হয়।

২০২২ সালে সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে সরকার থেকে বিদায় নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক আইনি জটিলয়তায় পড়েন  ইমরান খান। তার নামে প্রায় ২০০ মামলা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি চার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ইমরানকে ৩৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১০ বছরের জন্য তাকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বেশ কয়েক মাস  ধরেই কারাগারে রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। নির্বাচন থেকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে ক্রিকেট-কাম এই রাজনীতিবিদকে। তারপরও দারুনভাবে ভোটের ভেল্কি দেখিয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক।

পাকিস্তানের এই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ছিল মানুষের। আগ্রহ ছিল গোটা বিশ্বের। বিশেষ করে ইমরান খানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর আগ্রহ ছিল বিশেষ লক্ষ্যনীয়। আর রীতিমত চোখে আঙুল দিয়ে ইমরান খান দেখিয়ে দিয়েছেন এখনো তার জনপ্রিয়তা কতটা।

শনিবার(১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার পর পাকিস্তানের শীর্ষস্খানীয় গণমাধ্য জিও নিউজের লাইভ আপডেটের তথ্য অনুযায়ি, পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ২৬৫ আসনের মধ্যে ২৫২টি আসনের বেসসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআইকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করলেও দলের সমর্থিত প্রার্থীদের ৯৯ জন নির্বাচিত হয়েছেন। তারা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। অন্যদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) পেয়েছে ৭১টি আসন। আর  বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি- পিপিপি পেয়েছে ৫৩টি আসন। ভোটে সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও রাজনীতির খেলায় শেষ পর্যন্ত হারতে হচ্ছে ইমরান খানকে।

জাতীয় আইনসভার ২৬৬টি আসন ও ৭০টি সংরক্ষিত আসন নিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ গঠিত। পাঞ্জাব প্রদেশে সবচেয়ে বেশি ১৪১টি  আইনসভার আসন আছে। মূলত এই প্রদেশের ফলাফলের ওপরই সরকার গঠন অনেকাংশে নির্ভর করে। সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ৬০টি আসন নারীদের জন্য এবং ১০টি অমুসলিম বা সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশটির সরকার গঠন করতে অন্তত ১৩৪টি আসন দরকার। নির্বাচনের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের যেকোনো দলে যোগ দেয়ার সুযোগ আছে। এরপর ৩৩৬ সংসদ সদস্যদের ভোটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়  আসন পাচ্ছে না নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ এবং বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। তাই জোট সরকার গঠনে আলোচনা শুরু করেছে মুসলিম লীগ-নওয়াজ ও পিপিপি। পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ও তার বাবা পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন পিএমএল-এন-এর প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ।

পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মহসিন নাকভির বাড়িতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জোট বেঁধে কেন্দ্রে ও পাঞ্জাবে সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি  ভবিষ্যতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য পিপিপি ও পিএমএল-এন-এর নেতাদের বৈঠকে বসার আহ্বান জানান দুই দলের সিনিয়র নেতারা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন