এক সময়ের খরস্রোতা নদীর বুকে এখন ফসলের আবাদ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এক সময়ের খরস্রোতা ধরলা ও বারোমাসিয়াসহ বিভিন্ন নদ-নদীর বুকে এখন ফসলের আবাদ হচ্ছে। এসব নদ-নদীর চরে চাষিরা ১৪ থেকে ১৫ বছর ধরে বোরো ধান,ভুট্টা, বাদাম, কলা, মরিচ, বেগুন, কপি, সরিষা, আলুসহ বিভিন্ন চাষাবাদ করে আসছে। জলবায়ুর বৈরি প্রভাবের কারণে নদী এখন মরা খালে পরণিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চলতি বছরে ধরলা ও বারোমাসিয়াসহ বিভিন্ন নদীর অববাহিকার কৃষকরা ১৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করছেন বলে বায়ান্ন টিভিকে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন।
জানা যায়, মাত্র এক যুগ আগেও পানির প্রবাহতা ও প্রাণের স্পন্দন ছিল ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীতে। এই দুই নদীর প্রবল স্রোতের কারণে আতঁকে উঠতো নদী পাড়ের হাজারও বাসিন্দারা। এখন পানি না থাকায় ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীতে ছোট বড় প্রায় দুই শতাধিক চরের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে টানা ১৪ থেকে ১৫ বছর থেকে জলবায়ুর প্রভাবের কারণে নদী তিনটির ত্রীরবর্তী এলাকাগুলোতে পলিমাটি জমে নদীর তলদেশ ভরে উঠেছে। সে কারণে বছরের বেশি ভাগ সময় এখন নদীগুলোতে পানি থাকে না। বন্যার সময় দু/তিন মাস বাদে বছরের বাকিটা সময় নদীর বুক চিরে পুরোদমে চলছে চাষাবাদ।
স্থানীয়রা জানান, নদীর পানি ধারণক্ষমতা না থাকায় বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টিপাতে বন্যা হয়ে যায়। ফলে বছরে দু’বার চাষ করা গেলেও এখন আবহওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিন-চার ফসল ফলাতে পারছে কৃষক। এতে করে বর্ষা কাটিয়ে খরা মৌসুমের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষক।
ধরলা পাড়ের বোরো চাষি আলমগীর হোসেন ও জমসেদ আলী জানান,তাঁরা প্রত্যেকেই ধরলার বুকে ৫ বিঘা জমিতে রোবো চাষবাদ করছেন। তাদের মতো শতশত কৃষক ধরলার বুকে বোরো, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করে জীবন নির্বাহী করছেন। তারা প্রত্যেকে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ২৮ মন করে ধান ঘরে তোলেন আবহাওয়া অনুকুল থাকলে এবছরও ভাল ফলনের আশা করছেন।
একই এলাকার ভুট্টা চাষি নুর ইসলাম নুর জানান, ধরলার বুকে দেড় বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষাবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে এবছরও ভুট্টার বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
তবে বিপরীত অবস্থা নদী সংশ্লিষ্ট মাঝি ও জেলেদের, নদীতে নাব্য সংকট দেখা দেয়ায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ডিঙ্গি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহকারী জেলে পরিবার গুলো কঠিন দুশ্চিন্তায় পরেছেন। পানি প্রবাহ না থাকায় মাছের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। ফলে এখানকার জেলেরা পেশা পরিবর্তন করে অন্য কাজে নিয়োজিত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ধরলা ও বারোমাসিয়াসহ বিভিন্ন নদ-নদীর অববাহিকায় প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষাবাদ হয়েছে। এছাড়াও কলা ৬৫ হেক্টর, বাদাম ৮ হেক্টর, ডাল ৭ হেক্টর, কপি ৫ হেক্টর, সরিষা ১০ হেক্টর ও মরিচ ৫ হেক্টর চাষাবাদ করেছে।