জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে টানা ৮ম বারের মতো যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়েছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ, অস্ট্রিয়া, বাহরাইন, বলিভিয়া রোমানিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্থায়ী মিশনসমূহ, জাতিসংঘ সদর দপ্তর ও ইউনেস্কো এর সাথে যৌথ অংশীদারিত্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি, বাহরাইন, বলিভিয়া, রোমানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রিয়া, ভারত, হাঙ্গেরি, পাপুয়া নিউগিনি ও তানজানিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি বা রাষ্ট্রদূতগণ, জাতিসংঘ ও ইউনেস্কো-এর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ, জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ, কুটনীতিকগণ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা, আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ আশিক রহমান ও যুক্তরাষ্ট্রস্থ বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এতে অংশগ্রহণ করেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২০২৪ এর মূল প্রতিপাদ্য- ‘বহু ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা; প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞান চর্চা’র ওপর আলোচনায় অংশ নেন। এই বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানটিতে বহু ভাষার ব্যবহারে সমৃদ্ধ আলোচনা হয়। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষার পাশাপাশি বাংলা, হিন্দি ও রোমানিয়ান ভাষায় প্রদত্ত বক্তব্য ভাষান্তর করা হয়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদগণ এবং ভাষা আন্দোলনের পথিকৃত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই জাতির পিতার নেতৃত্বে শুরু হয় বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রাম, যার চূড়ান্ত পরিণতি পায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের মাধ্যমে।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশির উদ্যোগকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পূর্ণ স্বীকৃতি আদায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন রাষ্ট্রদূত মুহিত।
তিনি শিশুদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে মাতৃভাষা ভিত্তিক পাঠদানের গুরুত্ব তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত মুহিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবটি পুনর্ব্যক্ত করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও অন্যান্য বক্তাগণ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে বাংলাদেশের নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকার প্রশংসা করেন। মাতৃভাষার জন্য বিশেষ একটি দিন নির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তাঁরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষায় শিক্ষা প্রদানকে জ্ঞানার্জন ও মেধা বিকাশের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁরা এর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের আগে সকালে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনেও দিবসটি উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্থায়ী প্রতিনিধির নেতৃত্বে মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিশনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় উদ্বোধনী সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’, জাতিসংঘ চেম্বার মিউজিক সোসাইটি কর্তৃক পরিবেশিত যন্ত্রসংগীত এবং আরটিভির বাংলার গায়েনের শিল্পীসহ অভিবাসীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীবৃন্দের পরিবেশিত গান অন্তর্ভুক্ত ছিল। অনুষ্ঠানটি জাতিসংঘের ওয়েব টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যবৃন্দ এবং মহান একুশের ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।