দেশজুড়ে

আতর বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চলে সাইদুলের, পড়াশোনা বন্ধের উপক্রম

আতর বিক্রি করে অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ভরনপোষণ ও নিজের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন অনার্স পড়ুয়া ছাত্র সাইদুল ইসলাম। সাইদুল ইসলাম কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া সাইদুলকে অভাব- অনটন দমাতে পারেনি। অভাবের সঙ্গে লড়াই সংগ্রাম করে অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ও পরিবারের দেখভালের পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা।

জানা গেছে, আতর বিক্রেতা কলেজ ছাত্র সাইদুল ইসলামের বাড়ী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পুর্ব ফুলমতি গ্রামে। বাবা ফয়েজ উদ্দিন (৬৯) পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন। মা সাহেরা বেগম (৫৮) স্থানীয় চালকলে শ্রমিকের কাজ করতেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে সাইদুল দ্বিতীয়। বড়ভাই স্ত্রী সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। ছোট বোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। ওনার একটি কিডনি নষ্ট হয়েছিল। একটি কিডনির সাহায্যে কোন রকমেই বেঁচে আছেন। প্রথম দিকে চিকিৎসা করানো হলেও এখন আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকা অসুস্থ বাবার চিকিৎসা করাতে পারছে সংসারের হাল ধরা কলেজ ছাত্র সাইদুল। অসুস্থ বাবা বিছানায় পড়ে আছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি আতরের এই সুন্নাতি ব্যবসা চালিয়ে সব দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন মাইদুল ইসলাম।

সাইদুল ২০১৯ সালে বালারহাট আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। বাবা মায়ের আয়ে কোন রকমে পড়াশোনা চলছিল তার। কিন্তু ২০২১ সালে সাইদুল যখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তখন হঠাৎ কিডনি রোগে আক্রান্ত হন বাবা ফয়েজ উদ্দিন। বাবার চিকিৎসায় সহায় সম্বল সব শেষ হয়ে যায়। অসুস্থ স্বামীর সেবা যত্নের কারনে চালকলের কাজও ছেড়ে দেন সাহেরা বেগম। অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধের উপক্রম হয় সাইদুলের।

কলেজ ছাত্র সাইদুল ইসলাম জানান, একদিকে বৃদ্ধ বাবার চিকিৎসার খরচ, পরিবারের ভরণপোষণ অন্যদিকে নিজের ও ছোটবোনের পড়াশোনার খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে । সবকিছুর চিন্তায় আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। তখন রবিউল নামের এক বড়ভাই আমাকে সহযোগীতা করতে এগিয়ে আসেন। তিনি নিজের কলেজ এবং পাশ্ববর্তী বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রির জন্য কিছু আতর কিনে দেন। সেই থেকে আজ প্রায় তিন বছর ধরে আতর বিক্রি করেই চলছে আমার বাবা- মায়ের ভরনপোষণ, ছোটবোন ও নিজের পড়াশোনা। বর্তমানে আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। কলেজে ক্লাসের পর আতর টুপি তসবিহ নিয়ে বিক্রির জন্য বেরিয়ে পড়ি। কুড়িগ্রাম শহর, নিজ এলাকার বালারহাট বাজারসহ বিভিন্ন মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আতর, টুপি ও তসবিহ বিক্রি করি। এতে প্রায় প্রতিদিনই পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা আয় হয়। সাইদুল আরও জানান, পড়াশোনা শেষ করে চাকুরী না হলে বৃহৎ আকারে আতর ব্যবসা শুরু করবেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী সরকার জানান, সাইদুল আতর বিক্রির উপার্জনে খুব কষ্ট করে পরিবারের ভরণপোষণ এবং নিজের পড়াশোনা চালাচ্ছে। তাকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সিব্বির আহমেদ জানান, উপজেলা প্রশাসন বরাবরে একটি আবেদন করলে আমরা ওই কলেজ ছাত্রকে আর্থিক ভাবে কিছু সহযোগীতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন ইউএনও।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন