দুর্ঘটনা

‘মামা আমাদের বাঁচাও, আমরা বের হতে পারছি না’

সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের বিকালে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বইমেলায় গিয়েছিলেন পপি রাণী রায়। ফেরার পথে গিয়েছিলেন বেইলি রোডে ‘কাচ্চি ভাই’ নামের দোকানে বিরিয়ানি খেতে। সঙ্গে ছিলো তার মেয়ে আদ্রিজা (১২) আর ছেলে তূর্য (৬)।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওই ভবন থেকে অনেকের সঙ্গে তাদেরকেও উদ্ধার করে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

হাসপাতালের মর্গের সামনে আহাজারি করছিলেন পপি পোদ্দারের মা বাসনা পোদ্দার আর ভাই পীযূষ পোদ্দার। তাদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন অন্য স্বজনরা।

পীযূষ বলেন, আমাকেও খেতে যাওয়ার জন্য ফোন করেছিল। কিন্তু আমি যাইনি। টিভিতে খেলা দেখছিলাম। একটু পর আমার বোন ফোন করে আগুন লাগার কথা জানায়। পাশে থাকা ভাগ্নি চিৎকার করে বলছিল ‘মামা আমাদের বাঁচাও। আমরা বের হতে পারছি না’। আমি দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখি রেস্টুরেন্টে শ্মশানের মতো আগুন জ্বলছে। বাইরে থেকে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাসনা পোদ্দার বলছিলেন, ‘আমি কি পাপ করেছি যে এত বড় শাস্তি পেলাম! সব শেষ হয়ে গেলো।’

তিনি জানান, তার মেয়ে দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে বাসা থেকে বের হন। তার নাতি-নাতনি রেস্টুরেন্টে খাওয়ার বায়না ধরেছিল। তারা বেইলি রোডের গ্রীন কজি কট শপিংমলের এক রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিল।

স্বজনরা জানান, পপি পোদ্দার ছিলেন গৃহিণী। তার স্বামী শিপন পোদ্দার একজন ব্যবসায়ী। বড় মেয়ে আদৃতা সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। আর ছেলে সংকল্প পড়ত প্রথম শ্রেণিতে, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে।

রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া, এ ঘটনায় দ্বগ্ধ চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরাও শঙ্কামুক্ত নন। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ভবনটিতে আগুন লাগে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন