আর্কাইভ থেকে পরামর্শ

কথায় ও আচরণে সংযত হওয়াটাই ভালো দিক

কথায় ও আচরণে যতটা সংযত হবেন ততটাই ভালো এমনটা আমরা সবাই জানি। তারপরও জীবনে চলার পথে এমন অনেক মানুষকে আমরা দেখি যারা কথা আর কাজে তো মিল নেই আবার সামান্য আচরণ ভদ্রতাও থাকে না। এখন কথা হলো সবাইতো আর একই মানসিকতার হয় না। আমাদেরকে সবসময় মনে রাখতে হবে যেন আমার কথায় বা আচরণে কেউ মনে কষ্ট না পায়।

কথায় ভালো আচরণে সদাচার হলে মানুষের জীবনটাই পাল্টে যায়। আসলে যা কিছু ভালো ও কল্যাণকর তা ই শুদ্ধ। যা কিছু মন্দ, যা কিছু অকল্যাণকর তা-ই অশুদ্ধ। যা কিছু সত্য, সুন্দর ও শুভ তা ই শুদ্ধ। যা কিছু অসত্য ও অশুভ তা ই অশুদ্ধ। যা-কিছু ন্যায় ও মানবিক তা-ই শুদ্ধ। যা কিছু অন্যায়, জুলুম ও অমানবিক তা ই অশুদ্ধ। আর ঠিক এই কথাগুলোকে মানুষ অনুস্বরণ করে জীবনযাপন করে।

আপনি আমি সবাই চাই আমাদের সন্তান যেন আগে ভালো কথা বলা আর সুন্দর আচরণ করতে শেখে। যে কোনো সন্তানকে শুদ্ধাচারী আলোকিত মানুষ করতে হলে আপনাকে জানতে হবে ভালো-মন্দ সম্পর্কে, ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে, করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে। নৈতিক অনৈতিক যাচাই করে নিতে হবে প্রতিটি কথা ও কাজকে।

একজন মানুষের যে কারো সাথেই হোক না কেন কথা ও আচরণে  অনেকগুলো শিষ্টাচার থাকতে হবে। জানা থাকলেও সেগুলো চলুন একবার দেখে আসি।

১. কারো কথা শোনার সময় আন্তরিক ও মনোযোগী হোন।

২. ধীরে স্পষ্টভাবে শুদ্ধ ভাষায় এবং পরিমিত স্বরে কথা বলুন।

৩. কাকে কোথায় কীভাবে কতটুকু কথা কার সামনে বলছেন তা খেয়াল রাখুন। বলার ক্ষেত্রে কুশলী হোন।

৪. বয়স এবং সম্পর্কের ধরন যেমনই হোক সবচেয়ে সুন্দর ও নিরাপদ সম্বোধন হচ্ছে ‘আপনি’।

৫. গায়ের জোরে নিজের মত ও সিদ্ধামত্ম চাপিয়ে দিতে যাবেন না।

৬.প্রত্যেককে সম্মানসূচক সম্বোধনসহ অর্থবহ ভালো নামে ডাকুন। আলাপচারিতায় একাধিকবার নাম উল্লেখ করুন।

৭. আগ বাড়িয়ে বলার অভ্যাস ত্যাগ করুন।

৮. অনুমতি ছাড়া অন্যকে করা প্রশ্নের উত্তর নিজে দেবেন না।

৯. দুজনের কথার মাঝে কথা বলবেন না। কখনো বলে ফেললে ‘দুঃখিত’ বলুন।

১০. কারো কথা শোনার সময় অকারণে এদিক-ওদিক/মোবাইল স্ক্রিনের দিকে না তাকিয়ে তার প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিন।

১১. আলাপ-আলোচনার মাঝখানে ওঠার প্রয়োজন হলে অনুমতি নিয়ে উঠুন।

১২. বুঝতে বা শুনতে অসুবিধা হলে ‘হুঁ/ অ্যাঁ/কী' জাতীয় শব্দ না করে বলুন : জ্বী/দুঃখিত/দয়া করে আবার বলুন।

১৩. গুজব ও কানকথায় কান দেবেন না। যারা কানকথা ছড়ায় তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

১৪. একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় প্রত্যেকের দিকেই মাঝে মাঝে তাকান। তবে কারো দিকে অপলক তাকিয়ে থাকবেন না।

১৫. বাহুল্য কথা বর্জন করুন। অপ্রাসঙ্গিক ও অহেতুক কথাবার্তা আপনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে।

১৬. অপরপক্ষকে তার বক্তব্য শেষ করতে দিন। তারপর আপনি বলুন।

১৭. কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে সঙ্গত কারণ ছাড়া নীরব থাকবেন না। এতে তাকে অবজ্ঞা করা হয়। কিছু না বললেও স্মিত হাসুন।

১৮. বাস্তব কারণে কখনো সত্য বলতে না পারলেও অহেতুক মিথ্যা বলবেন না। নীরব থাকুন।

১৯. কথায় কথায় শপথ করা, কসম কাটা বা অভিশাপ দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

২০. বয়োজ্যেষ্ঠ কারো সাথে কথা বলার সময় তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে আপনিও দাঁড়ান। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ও মুখভঙ্গিতে বিনয় প্রকাশ করুন।

২১. মুখের কাছে মুখ নিয়ে, গায়ে হাত দিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।

২২. জনসমক্ষে নিজের গুরুত্ব জাহির করার উদ্দেশ্যে আমন্ত্রিত অতিথি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কানে কানে কথা বলবেন না।

২৩. অপ্রাসঙ্গিক ও অর্থহীন কথাবার্তা, আলাপ, আড্ডা এড়িয়ে চলুন। আপনার সময় ব্যয় করুন আপনার রুটিন অনুসারে।

২৪. অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলার সময় বোঝার চেষ্টা করুন- তিনি আপনার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী কিনা।

২৫. ধর্মগ্রন্থ থেকে কোনো বাণী উদ্ধৃত করলে তার সুনির্দিষ্ট রেফারেন্স উল্লেখ করুন। কোরআনের বাণীকে ‘হাদীসে আছে’ অথবা হাদীসকে ‘কোরআনে আছে’-এ ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। 

মূলত আপনার আচারই বলে দেবে আপনি ধার্মিক, না অধার্মিক। আসলে ধার্মিক যেমন দুরাচারী হতে পারে না, তেমনি দুরাচারীও কখনো ধার্মিক বলে গণ্য হতে পারে না। করণীয়-বর্জনীয়গুলো আন্তরিকতার সাথে যিনিই অনুসরণের চেষ্টা করবেন, নিঃসন্দেহে তিনি হয়ে উঠবেন একজন ভালো মানুষ। 

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন