‘পিএইচডি সবজি ওয়ালা’
এই সবজি বিক্রেতা উচ্চ শিক্ষিত, ঝুলিতে চার চারটি স্নাতকোত্তরের ডিগ্রি, পিএইচডিও করেছেন। উচ্চশিক্ষিত হওয়া সত্বেও ভ্যান টানছেন তিনি। তার ডিগ্রি কি তাহলে কোন কাজেই লাগল না? শেষে কিনা সবজি বিক্রি!
এই ব্যক্তি ১১ বছর অধ্যাপনা করেছেন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু সে চাকরিতে সংসার চলতো না। অবশেষে চাকরি ছেড়ে ভ্যান নিয়ে এখন রাস্তায় রাস্তায় সবজি বিক্রি করছেন। ভ্যানের গায়ে সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লেখা ‘পিএইচডি সবজি ওয়ালা’। তিনি গোটা দেশের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন,তাহলে কি অধ্যাপনার থেকেও সবজি বিক্রি করে বেশি টাকা আয় করা যায়?
ওই সবজিওয়ালার নাম ডক্টর সন্দীপ সিং। সাংবাদিকতা, পাঞ্জাবি ভাষা এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো চারটি ভিন্ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। আইন বিষয়ে করেছেন পিএইচডি। পড়াশোনা এখনো চলছে। আমি আপনি ছোট থেকেই জেনে এসেছি, আমাদের সমাজ আমাদের শিখিয়েছে, ভালো পড়াশোনা করলে ভাল চাকরি করা যায়, কোট টাই পড়ে বড় অফিসে যাওয়া যায়। কিন্তু সন্দীপ সিং তা করছেন না, বিক্রি করছেন সবজি। যদিও এই কাজে তার কোন আক্ষেপ নেই। ১১ বছর পাতিয়ালা পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। আসলে তার চাকরিটা ছিল চুক্তিভিত্তিক, তার উপর বেতনও বারবার কমিয়ে দেওয়া হতো। কোন কোন মাসে আবার টাকা পেতেনই না। এই বাজারে এসংসার চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে ৩৯ বছর বয়সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাধ্য হন সবজি বিক্রি করতে। প্রথমটা তার কাছে খুব চ্যালেঞ্জের ছিল। এখন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। এক সময় অধ্যাপনা করে যে টাকা আয় করতেন, এখন শাকসবজি বিক্রি করে বেশি টাকা আয় করছেন।
এই পৃথিবীতে কোন কাজই কিন্তু ছোট নয়। সব কাজই অত্যন্ত সম্মানের। কিন্তু ফারাকটা কি বলুন তো, স্বপ্ন আর প্রত্যাশার। যে স্বপ্নের জন্য আপনি দীর্ঘ দিন লড়াই করলেন, সময় ইনভেস্টমেন্ট করলেন কিন্তু শেষমেষ স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। যার স্বপ্ন ভাঙে, সেই জানে তার যন্ত্রণা। আরো আশ্চর্য এর বিষয় কি জানেন? এই পৃথিবীতে আপনার স্বপ্ন ভাঙার যন্ত্রণার খোঁজ কেউ নেবে না। শুধু শুধু আপনার ব্যর্থতা টাই দেখবে।
তা বলে সন্দীপ বাবু কিন্তু স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। দিনভর সবজি বিক্রি, আর রাতে চলে পড়াশোনা। আসন্ন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও থেমে নেই। এনার স্বপ্ন, একটা ভালো টিউশন সেন্টার তৈরি করা। আর তার জন্যই একটু একটু করে টাকা জমাচ্ছেন। বিশ্বাস করেন, মানুষের ক্ষমতায়নের আসল চাবিকাঠি শিক্ষা। শিক্ষার মাধ্যমেই জীবনটা বদলে ফেলা যায়। তার জন্য সবজি বিক্রি করলে খুব একটা অসুবিধা নেই। সন্দীপবাবুর এই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই, হার না মানা জেদ আমাদের অনুপ্রেরণা।