কেক কাটার পরে ট্রেনের নিচে মা-মেয়ের ঝাঁপ
যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটিতে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে মা ও মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার আগে তারা কেক কাটেন বলে জানা গেছে। মৃতরা হলেন- যশোর সদর উপজেলার বড় হৈবতপুর গ্রামের মৃত মকসেদ আলীর মেয়ে লাকি বেগম (৩৫) ও তার মেয়ে সুমাইয়া খাতুন মিম (১২)। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আত্মহত্যার কারণ জানা যায়নি।
আজ সোমবার (২৫ মার্চ )বিকাল ৩টার দিকে চুড়ামনকাটির পোলতাডাঙ্গা শ্মশানঘাট এলাকার রেললাইনে এ ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সেলিম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা এখনো জানা যায়নি। মরদেহের পাশ থেকে একটি বড় আকারের কেক, একটি মোবাইল ফোন ও দুটি ভ্যানিটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। রেলওয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার বড় হৈবতপুর গ্রাম পৈতৃক ঠিকানা হলেও স্বামী পরিত্যক্ত লাকি বেগম একমাত্র মেয়ে সুমাইয়া খাতুন মিমিকে সঙ্গে নিয়ে সাতমাইল বাজারে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন।
সোমবার বিকাল ৩টার দিকে লাকি বেগম তার মেয়ে মিমকে সঙ্গে নিয়ে চুড়ামনকাটির পোলতাডাঙ্গা শ্মশানঘাট এলাকার রেললাইনের কাছে আসেন। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী সুন্দরবন ট্রেনটি যাচ্ছিল। মেয়েকে নিয়ে লাকি বেগম ওই ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। ঘটনাস্থলে একটি কেক পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তারা কেক কেটে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন রাখাল জানান, তারা মাঠে গরু চরাচ্ছিলেন। এ সময় দেখতে পান, রেললাইনে বসে লাকি বেগম ও তার মেয়ে কেক কেটে খাচ্ছেন। কিন্তু ট্রেন আসার মুহূর্তে লাকি বেগম তার মেয়েকে হাত ধরে টেনে রেললাইনের ওপর ওঠানোর চেষ্টা করছিলেন। একপর্যায়ে ট্রেন কাছে এলে মা-মেয়ে একসঙ্গে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন। এতে ট্রেনে কাটা পড়ে তাদের মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী চুড়ামনকাটির পোলতাডাঙ্গা এলাকার সাখাওয়াত হোসেন জানান, মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে লাকি বেগম ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলে যাওয়ার পর তিনি লাশ দুটি পড়ে থাকতে দেখেন।
নিহতের ছোট বোন রোজিনা খাতুন জানান, তিনি জানতেন তার বোন লাকি বেগম সকালে ডাক্তার দেখাতে যশোর শহরে গেছেন। পরে তার বোনের মোবাইল থেকে ফোন করে জানানো হয় তারা ট্রেনে কেটে মারা গেছে। তবে কী কারণে তারা আত্মহত্যা করেছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।
রোজিনা খাতুন আরও জানান, তার বোনের দুই জায়গায় বিয়ে হয়েছিল কিন্তু সংসার টেকেনি। পরে তিনি মেয়েকে নিয়ে সাতমাইল এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
যশোর রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মনিতোষ বিশ্বাস জানান, খবর পেয়ে ট্রেনে কাটা মা ও মেয়ের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। এরপর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছেন। তবে কেন এবং কী কারণে মেয়েকে নিয়ে ওই নারী আত্মহত্যা করলেন তা এখনো জানা যায়নি।