শিশু ক্রয়ের অর্ডার নিয়ে অপহরণ করতো তারা
রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগ থেকে আড়াই বছর বয়সী এক শিশু অপহরণের ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীর একটি অপহরণ চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রমনা বিভাগ।
গ্রেপ্তাররা হলো, অপহরণকারী সুলতানা আক্তার ওরফে নেহা (২২), তার স্বামী সাইফুল ইসলাম (২৭) ও ক্রেতা মো. শাহজাহান (৩৪)।
বুধবার (২৭ মার্চ) কুমিল্লার লালমাই ও বরুড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি জানায়, চক্রটি নিঃসন্তান দম্পতির কাছ থেকে শিশু দেয়ার অর্ডার নিয়ে অপহরণের জন্য মাঠে নামতো। পরবর্তীতে চাহিদা মতো শিশু পেলে কৌশলে অপহরণ করে বিক্রি করে দিতো নিঃসন্তান দম্পতির কাছে। সম্প্রতি রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে আড়াই বছর বয়সী এক শিশুকে অপহরণ করে কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় নিয়ে বিক্রি করে দেয় চক্রটি। এ নিয়ে শিশুটির বাবা ডিএমপির গত ২১ মার্চ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার শিশুটি উদ্ধারের জন্য মাঠে নামে ডিবি রমনা বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, রাজধানীর হাজারীবাগ থানার নিউ মডেল টাউন এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। পেশায় রিকশা চালক নুরল দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে হাজারীবাগ এলাকায় বসবাস করছেন। গত ২১ মার্চ বিকেলে বাসার সামনে তার ৬ বছর বয়সী মেয়ে তাবাসসুম ও ছেলে তাওসীন খেলেতে যায়। এই সময় শিশুদের নানী তাদের সঙ্গে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর একজন বোরকাপরা নারী বাসার সামনে এসে শিশুদের নানীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এর কিছু সময় শিশুদের নানী বাচ্চাদের রেখে বাসায় চলে যায়। এ সুযোগে ওই নারী শিশুদের ইশারা দিয়ে ডেকে নিয়ে দুজনকে চিপস কিনে দেয়। চিপস নিয়ে তাবাসসুম বাসায় ফিরে গেলেও শিশু তাওসীন নিজের কাছে রেখে দেন ওই নারী। একপর্যায়ে ওই নারী তাওসীনকে কোলে নিয়ে ঝাউচর মেইন রোডের দিকে চলে যায়।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির ছায়া তদন্তে নেমে অপহরণ চক্রটিকে শনাক্ত করেন ডিবির রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনাল টিমের সদস্যরা। পরবর্তীতে গতকাল কুমিল্লার লালমাইয়ে অভিযান চালিয়ে শাহজাহানের বাড়িতে থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। তিনি ৫০ হাজার টাকায় শিশুটিকে সাইফুল-নেহা দম্পতির কাছ থেকে কিনে নেন। এছাড়া একই দিনে বরুড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে নেহা ও সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নিঃসন্তান দম্পতির কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে চাহিদা মতো শিশু চুরি করে বিক্রি করতেন। অপহরণের কাজটি করতেন সাইফুলের স্ত্রী নেহা। তিনি বিভিন্ন এলাকা শিশুদের টার্গেট করতেন। এরপর কৌশলে শিশুদের চকলেট, চিপসসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে কোলে করে নিয়ে সটকে পড়তেন। ভুক্তভোগী শিশু তাওসীনকে তারা অপহরণ করে কুমিল্লার শাহজাহানের কাছে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিল।
হারুন বলেন, যাদের সন্তান নেই বা হয় না। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা সঠিক পদ্ধতিতে শিশু দত্তক নিন। কারো কোলের শিশু চুরি করে বা অপহরণ করে নিয়ে আপনাদের কাছে দিলো, আপনারা শিশুটিকে রাখলেন এটা অপরাধ। আর এমন অপরাধে আপনারাও একই মামলার আসামি হবেন। পাশাপাশি সন্তানদের পিতা-মাতাকে বলবো আপনার বাচ্চা বাসার বাইরে গেলে তাদের সঙ্গে পরিবারের বড় সদস্যরা থাকবেন। না হলে এমন ঘটনা আবারও ঘটতে পারে।