ছেলের ছুরিকাঘাতে বাবার নির্মম মৃত্যু, ঘাতক ছেলে কারাগারে
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ছেলের ছুরিকাঘাতে আকবর আলী ওরফে একাব্বর মেম্বার (৫৯) নামে সাবেক এক ইউপি সদস্যের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক ছেলে কারাগারে। গুরুতর আহত হয়েছেন তার স্ত্রী সাহেরা বানু (৫৫)।
গত শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের চর জ্যোতিন্দ্র নারায়ণ গ্রামে এই নির্মম ঘটনাটি ঘটে। নিহতের ছোট ভাই আলাউদ্দিন ওই দিন রাতে বাদী হয়ে ফু্লবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রোববার (৭ এপ্রিল) দুপুর দেড়টায় গ্রেপ্তারকৃত ঘাতক ছেলে সাজেদুলকে পুলিশ কুড়িগ্রাম কারাগারে প্রেরণ করেছে।
জানা যায়, খবর পেয়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফুলবাড়ী থানার এস আই ইব্রাহিম খলিল, তাজ উদ্দিন ও জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের টিম ঘটনার সাড়ে ৪ ঘন্টা পর নিহতের বাড়ী থেকে ৫শ গজ দুরে একটি ভুট্টা ক্ষেত থেকে বিকাল সাড়ে ৪ টায় ঘাতক ছেলে সাজেদুল ইসলামকে (৩৫) হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান।
গতকাল থেকে ওই পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নির্মম ঘটনার কারণে ঈদের আনন্দ ওই পরিবারসহ স্বজনদের মাঝে মাটি হয়ে গেলো।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মজিবর রহমান জানান, আকবর আলীর তিন ছেলের মধ্যে সাজেদুল অনেকদিন থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন। আকবর আলী তার অনেক চিকিৎসা করালেও সে সুস্থ হয়নি। এ কারনে তার স্ত্রীও দুই বছর আগে স্বামীর সংসার ত্যাগ করেন।
তিনি আরও জানান, সে মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও সংসারের সকল কাজকর্ম করেন সাজেদুল ইসলাম। ভুট্টা ক্ষেতে পানি দিয়ে সকালে বাড়ি ফেরেন সে। এ সময় বাবা আকবর আলী তাকে খাওয়া দাওয়া করে আবারও ভুট্টা ক্ষেতে পানি দেয়ার জন্য যেতে বলেন। কিন্তু ভাত খাওয়ার জন্য রান্না ঘরে গিয়ে সাজেদুল দেখতে পান রান্না ঘরে ভাত নেই। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে মা সাহেরা বানুকে আঘাত করে। পরে স্ত্রীকে বাঁচাতে আকবর আলী এগিয়ে আসলে সাজেদুল ওই ছুরি তার বাবার পেটে ঢুকিয়ে দেয়। ছুরির আঘাতে স্বামী স্ত্রী গুরুত্বর আহত হন। আহতদের চিৎকার চেঁচামেচিতে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে ফুলবাড়ী পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে বিকাল ৪ টার দিকে আকবর আলী মৃত্যু বরণ করেন। বর্তমানে সাহেরা বানু গুরুতর আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অন্যদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহতের মরদেহ নেয়ার অপেক্ষা করছেন স্বজনরা।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রাণকৃষ্ণ দেবনাথ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শনিবার রাতেই নিহতের ভাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন এবং ঘাতক ছেলেকে রোববার দুপুরে কুড়িগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ ও পরিবার সুত্রে জানা গেছে সে সামান্য মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী। তারপরেও গুরুত্বসহকারে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।