আন্তর্জাতিক

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ গেলো ৯জনের

ভূমধ্যসাগরের ল্যাম্পেডুসা দ্বীপে একটি নৌকাডুবির ঘটনায় ৯ জন মারা গেছেন।  বৃহস্পতিবার(১১ এপ্রিল) ওই দুর্ঘটনার কবলে পড়া ২২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ইতালীয় উপকূলরক্ষীদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপ ‘র প্রতিবেদনে এতথ্য জানা গেছে।

জীবিতদের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, স্টিল-বটম বোটটি গিনি, বুর্কিনা ফাসো, মালি ও আইভরি কোস্ট থেকে ৪৬ জন মানুষকে নিয়ে রোববার রাতে তিউনিসিয়ার স্ফ্যাক্স থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। বুধবার সকালে  ভূমধ্যসাগরের ল্যাম্পেডুসা দ্বীপে নৌকাটি ডুবে যায়।

নৌকাডুবির উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি  

জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন বলছে, চলতি বছরের ১১ মার্চ পর্যন্ত ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় পথে ২২৭ জন মারা গেছেন। নতুনভাবে খবর পাওয়া নিখোঁজ ও সম্ভাব্য মৃতদের সংখ্যা এতে অন্তর্ভুক্ত নয়। ১ জানুয়ারি থেকে ভূমধ্যসাগরে মোট ২৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়কালে ওই সমুদ্রপথে ইতালিতে পৌঁছেছেন মোট ১৯ হাজার ৫৬২ জন।

ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে বাংলাদেশির সংখ্যাও বাড়ছে। গত ২১ জুলাই অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের ইতালি যাওয়ার সময় একটি নৌকাডুবির ঘটনায় অভিবাসনপ্রত্যাশী ১৭ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল জুয়ারা থেকে অভিবাসপ্রত্যাশীদের নিয়ে ওই নৌকাটি ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ভূমধ্যসাগরে তিউনিশিয়ার উপকূলে ডুবে যায়। পরে ওই ডুবে যাওয়া নেীকা থেকে ১৭ বাংলাদেশির মরদেহ ও ৩৮০ জনের বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এর আগে,গত ০৮ জুলাই অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার সময় আফ্রিকার  তিউনিশিয়ার উপকূলে এবটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া ওই নৌকা থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশী ৪৯ জন বাংলাদেশিকে তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ড সদস্যরা উদ্ধার করে।

এরও আগে, ২০১৯ সালের মে মাসে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে অন্তত ৪০ বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু ঘটে।

কেন ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপ?

অবৈধভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছানোর পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনা বেড়েই চলেছে। অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঠেকাতে ভূমধ্যসাগরে নজরদারি বাড়লেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকে সাগর পাড়ি দিচ্ছেন। তবে ভূমধ্যসাগরে নৌকায় করে বহু মানুষের ইউরোপ অভিযাত্রা শেষ হচ্ছে সলিলসমাধিতে।

উন্নত জীবন আর বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে অবৈধভাবে যারা ইউরোপের দেশগুলোতে  প্রবেশ করতে চায়, তাদের জন্য সুবিধাজনক জায়গা হচ্ছে আফ্রিকার দেশ লিবিয়া।

দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জীবিকা এবং ভাগ্যান্বেষণের জন্য অভিবাসনপ্রত্যাশীরা  জীবনঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে ইউরোপের দিকে যাওয়ার জন্য এই রুট ব্যবহার করে থাকে। কারণ ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে ইউরোপের প্রাকৃতিক সীমানা থাকায় এবং এখানে নজরদারি রাখা কঠিন হওয়ায়  এই রুটে অভিবাসনের প্রচেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের নাগরিকেরা ভাগ্যের চাকা বদলানোর উদ্দেশ্য নিয়ে নানা উপায়ে লিবিয়া পৌঁছে।সাধারণত গ্রীষ্মের কাছাকাছি সময় আফ্রিকা থেকে ইউরোপে আসার প্রবণতা বেড়ে যায়

তারপর দেশটির  জুয়ারা উপকূল  থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনেকে ইতালি পৌঁছে থাকে। তবে ভূমধ্যসাগরের এরুট পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথগুলোর একটি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বহু মানুষের ইউরোপ অভিযাত্রা শেষ হচ্ছে সলিলসমাধিতে।

লিবিয়ায় সরকার ব্যবস্থা অস্থিতিশীল থাকায় এবং দেশটির উল্টো দিকে ইউরোপ হওয়ায় মানব পাচারকারীরা রুট হিসাবে লিবিয়ার উপকূলকে বেশি পছন্দ করে। সেখানে অনেক আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে।এসব চক্রের লোকজন জাল কাগজপত্র তৈরি করে,মিথ্যা তথ্য দিয়ে লোকজনকে ইউরোপে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে।এজন্য তারা মূলত ইতালিকে বেছে নেয়।

পরিসংখ্যান বলছে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যারা ইউরোপে পৌঁছায় তাদের ৮০ ভাগই জীবিকার সন্ধান পায়। অন্যদের অন্তত পাঁচ বছর নানা সংগ্রাম ও প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে হয়। সামান্য কজনই এ দীর্ঘ সময় ধৈর্য ধরে ইউরোপে জীবিকার সন্ধান করে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন