ঢালিউড

ঈদের কোনো ছবি আর চলবে না! সোশ্যাল হ্যান্ডেলে প্রতিবাদের ঝড়

গেল ঈদে মুক্তি পায় মোট ১১টি সিনেমা! এগুলোর মধ্যে স্টার সিনেপ্লেক্স চালায় ৮টি ছবি। কিন্তু চতুর্থ সপ্তাহে এসে আচমকা সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের কোনো ছবি শুক্রবার থেকে আর চলবে না! স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজকুমার, দেয়ালের দেশ ও কাজলরেখার তিন নির্মাতা। সমাজমাধ্যমে তারা আলাদাভাবে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের সমালোচনা করেন। কারণ ছাড়াই ‘হাউজফুল’ ছবি নামিয়ে দেয়ারও অভিযোগ তুলেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম, হিমেল আশরাফ এবং মিশুক মনি।

নির্মাতারা তাদের প্রতিক্রিয়ায় একটাই অভিযোগ করেন- শুক্রবার (৩ মে) থেকে দেশের সবচেয়ে বড় মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্স তাদের শো-সিডিউল থেকে ঈদের সবগুলো সিনেমা নামিয়ে দিচ্ছে। বিনিময়ে তুলছে বিদেশি ছবি। তারা বলছেন, শো ভালো যাওয়ার পরেও এমন করা হয়েছে।

নির্মাতা হিমেল আশরাফ গণমাধ্যমে বলেন, এক সপ্তাহে টিকিট বিক্রিতে প্রথমে ছিল যেই সিনেমা, সেই সিনেমার কোনও শো পরের সপ্তাহে নেই, ১টা শো-ও না! ঈদের সবগুলো বাংলা সিনেমা সিনেপ্লেক্স থেকে উধাও হয়ে গেল! প্রতিদিন ৫০টার ওপরে শো স্টার সিনেপ্লেক্সের। এর মধ্যে ১টা শো পাওয়ার যোগ্যতা নেই ঈদের কোনও সিনেমার?

এসময় তিনি আরও বলেন, আজকে সন্ধ্যার ‘রাজকুমার’ ও ‘কাজলরেখা’র শোর টিকিট অনলাইনে চেক করে দেখেন, ৬০ শতাংশ অলরেডি সোল্ড আউট। আগামী শুক্রবার (৩ মে) থেকে বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে ৬টা বিদেশি সিনেমা চলবে, যেখানে বাংলা সিনেমা চলবে ১টা! ১৬টা শো বিদেশী সিনেমার, ৪টা শো বাংলা সিনেমার! বাংলাদেশের সিনেমা হল, বাংলাদেশের মানুষই দর্শক, বাংলা সিনেমার দর্শক থাকার পরেও বাংলা সিনেমা নাই! এই দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াতে অনেক পথ বাকি, অনেক…।

স্টার সিনেপ্লেক্স প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া ও মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমে বলেন, প্রথমত আমরাও বাংলাদেশী। এই প্রতিষ্ঠান বিদেশি নয়। এই প্রতিষ্ঠান নিজেরাও বাংলা সিনেমা প্রযোজনা করে। দেশের প্রতিটি সিনেমার প্রতি আমাদের আন্তরিকতা ও সততা রয়েছে সবসময়। দেশের প্রতিটি নির্মাতা-প্রযোজকের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও আগ্রহ বরাবরই বেশি। অথচ আজ মে দিবসে যে অভিযোগটি উঠলো স্টার সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে, সেটি তুলতে আমরা কেউ একটিবারও ভাবিনি। এটাই আসলে খারাপ লাগার বিষয়।’

স্টার সিনেপ্লেক্সের এই মুখপাত্র এবার সরাসরি বলেন মূল কথা, ‘আজ মে দিবস। সরকারি-বেসরকারি বন্ধের দিন। আজকের শো-টিকিটের সঙ্গে তো সপ্তাহের অন্য দিনগুলো মেলানো ঠিক নয়। আপনারা গতকাল বা আগামীকালকের খবরটা নিন প্লিজ। গত সপ্তাহের খবর নিন। তখন বুঝবেন, কেন আমাদের চতুর্থ সপ্তাহ নিয়ে ভাবতে হলো। বরং এটা বলতে পারি, ঈদের পর বিদেশের যে দুটো ছবি আমরা তুলেছি, সেগুলো আমাদের হতাশ করেছে। কিন্তু সেই ছবিগুলোকেও আমার শো দিতে হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহেই আমাদের এভাবে সিডিউল করতে হয় দেশ-বিদেশের ছবি মিলিয়ে। এটাই গ্লোবাল নিয়ম। তাছাড়া শো রি-সিডিউল করাতো আমাদের হাতেই। চাইলে আজও আমরা বদলাতে পারি। দুদিন পরেই হয় তো ‘মুচাচোস’ আর ‘দ্য ফল গাই’ শো কমিয়ে বা নামিয়ে ঈদের ছবিগুলো আবার তুলবো। সেই পরিকল্পনা তো আমরা সবসময় করি।

নির্মাতারা প্রমাণসহ অভিযোগ তুলে দেখিয়েছেন, বুধবারও (১ মে) তাদের সিনেমাগুলোর শো প্রায় ‘হাউজফুল’। তবুও কেন চতুর্থ সপ্তাহের মাথায় নামাতে হবে ছবিগুলো? এদিকে ‌‘কাজলরেখা’ নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের আহ্বান, ‘বসুন্ধরায় আজকের ৪টা ৩০ এর শো হাউজফুল। তারপরও আগামী শুক্রবার থেকে বিদেশি ছবির জন্য ‘কাজলরেখা’র কোনও শো নাই। কেন? ঈদের অন্য সিনেমাগুলোও নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্তত ৪০ শতাংশ শো বরাদ্দ দেশি সিনেমার জন্য রাখার অনুরোধ করছি।’

এদিকে তিন নির্মাতার প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। আলোচনা-সমালোচনা করছেন বাংলা সিনেমা প্রেমীরা। সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ দেখা গেছে শুক্রবার (৩ মে) নতুন করে আবার ‘রাজকুমার’ ছবির শো রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য,গেলো (২৬ এপ্রিল) স্টার সিনেপ্লেক্স মুক্তি দিয়েছিলো তুমুল আলোচিত স্প্যানিশ ভাষায় নির্মিত আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের ডকুফিল্ম ‘মুচাচোস’। সেটি এরমধ্যে ভালো দর্শক পায়নি। বুধবার (১ মে) মাল্টিপ্লেক্সটি মুক্তি দিয়েছে হলিউডের আলোচিত নতুন ছবি ‘দ্য ফল গাই’। প্রথম দিনেই এটির টিকিট বিক্রি হতাশাজনক। তাহলে কী কারণে স্টার সিনেপ্লেক্স ‘প্রায় হাউজফুল’ বাংলাদেশী ছবিগুলো নামিয়ে দিচ্ছে? কিন্তু আবেগে তো আর ইন্ডাস্ট্রি চলে না। টানা তিন সপ্তাহ কেন, ছয় সপ্তাহ চালানোর পরেও যদি কোনও সিনেমার দর্শক থাকে, সেটি নামিয়ে দিলে আপত্তি বা অভিযোগ উঠবেই। সেই অভিযোগটাই তুলেছেন নির্মাতারা। কেন নামাতে হচ্ছে ছবিগুলো?

এএম/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন