ইসরায়েলের পক্ষে বাইডেনের জোরালো অবস্থান
গাজায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার শিকার হচ্ছে নিরীহ ফিলিস্তিনবাসী। অবরুদ্ধ এই উপত্যকার এমন কোনো স্থান বাকি নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি। অবরুদ্ধ এ ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ।
এমনকি ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। তবে ইসরায়েলের পক্ষে জোরালোভাবে অবস্থান নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গণহত্যা করছে না এবং গাজায় যা হচ্ছে তা গণহত্যা নয়।
মঙ্গলবার (২১ মে) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার (২০ মে) ইসরায়েলের পক্ষে জোরালোভাবে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় তাদের সামরিক অভিযানে গণহত্যা চালাচ্ছে না।
এমনকি গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা ও গণহত্যার বিষয়ে ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারীদের সমালোচনাও প্রত্যাখ্যান করেছেন বাইডেন। হোয়াইট হাউসে ইহুদি আমেরিকান হেরিটেজ মান্থ ইভেন্টে তিনি বলেন, ‘গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যা নয়। আমরা এটি প্রত্যাখ্যান করছি।’
মূলত গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এমন অবস্থায় ফিলিস্তিনিপন্থিদের কাছ থেকে প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়েছেন বাইডেন।
এসব বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের প্রতি তার অবিচল সমর্থনের জন্য বাইডেনকে ‘জেনোসাইড জো’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
রয়টার্স বলছে, সোমবার হোয়াইট হাউসের ওই ইভেন্টে বাইডেন গেলো বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার কথা সামনে এনে ইসরায়েল নিজেই ‘ভিকটিম’ বলে জোর দেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলিদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ‘লোহার আবরণের মতো দৃঢ়’।
তিনি বলেন, ‘আমরা (হামাস নেতা ইয়াহিয়া) সিনওয়ার এবং হামাসের বাকী কসাইদের খুঁজে বের করতে ইসরায়েলের সাথে আছি। আমরা হামাসকে পরাজিত করতে চাই। আমরা ইসরায়েলের সাথে কাজ করছি যাতে হামাসকে পরাজিত করা যেতে পারে।’
এছাড়া প্রেসিডেন্ট বাইডেন গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। গেলো রোববার (১৯ মে) মোরহাউস কলেজে নিজের প্রারম্ভিক বক্তৃতায়ও বাইডেন এটির পুনরাবৃত্তি করেন।
এদিকে গাজায় যুদ্ধাপরাধের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জমা পড়েছে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি)।
আইসিসির শীর্ষ প্রসিকিউটর করিম আসাদ আহমেদ খানের (করিম খান) দপ্তর থেকে করা হয়েছে এই আবেদন। তবে বাইডেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটরের এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সোমবার আইসিসির প্রসিকিউটর আরও বলেছেন, তিনি হামাস প্রধান সিনওয়ার এবং হামাসের অন্য দুই নেতার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেছেন।
উল্লেখ্য, গেলো ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৫৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
এসি//