রাহুল গান্ধী নাকি অন্য কেউ, কে হচ্ছেন বিরোধী দলনেতা?
সবকিছু ঠিক থাকলে রোববার(৯ জুন) ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বারের মতো শপথ গ্রহণ করছেন নরেন্দ্র মোদি। তবে লোকসভায় বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ারে কে বসবেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে জাতীয় কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের নামও শোনা যাচ্ছে। রাহুল ও অখিলেশ দু’জনই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের বিরোধী জোট ইনডিয়া’র প্রভাবশালী দুই নেতা।
গত দুই লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী দলের নেতা হওয়ার জন্য ন্যূনতম আসনে জয় পায়নি জাতীয় কংগ্রেস। তবে এবার পরিস্থিতি অন্য। সরকার গঠন করতে না পারলেও লোকসভায় ২৩৪টি আসন দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোট। কংগ্রেস একাই জিতেছে ৯৯টি আসন। এর অর্থ বিরোধী দলের নেতার চেয়ারে বসে সরকারকে কোণঠাসা করার ভালো সুযোগ রয়েছে কংগ্রেস নেতা রাহুলের হাতে।
প্রায় ১০ বছর পর লোকসভায় বিরোধী দলনেতা পাচ্ছে ভারত। আর সেই পদে দলের প্রধান মুখ রাহুল গান্ধীকে চাইছে কংগ্রেস দল। শনিবার(৯ জুন) দিল্লিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুলকে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করে প্রস্তাব পাস হয়েছে। তবে রাহুল এতে সম্মতি দিয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি। ওই বৈঠকে সোনিয়া গান্ধীকে দলের সংসদীয় দলের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ভারতের লোকসভা ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিরোধী দলনেতাকে স্বীকৃতি দেয়নি। পদটি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে এবং বর্তমানে ২৬ মে ২০১৪ থেকে শূন্য। কারণ বিরোধী দলনেতার পদ পেতে হলে লোকসভায় একটি দলকে মোট আসনের ১০ শতাংশ আসন পেতে হয়। অর্থাৎ ৫৫ জন সংদস্য সদস্য প্রয়োজন পড়ে। ২০১৪ সালে এবং ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ন্যূনতম সেই সংখ্যাও জোগাড় করতে পারেনি কংগ্রেস। তবে এবার কংগ্রেসের হাতে ৯৯ জন সংদস্য সদস্য রয়েছে।
কংগ্রেসের পাওয়া আসন ছাড়াও সঙ্গে রয়েছে ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সমর্থন। ফলে কংগ্রেসের হাতে সরকারকে কোণঠাসা করার ভালো সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাহুল বিরোধী দলীয় নেতা হলে ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে লড়াইটা বেশ জোরালো ও ‘সেয়ানে সেয়ানে’ হবে বলে মনে করছে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটি।
বৈঠকে কংগ্রেস দলের বেশিরভাগ নেতাদের মত হচ্ছে, গত দুই লোকসভা নির্বাচনের পর এবার নির্বাচনে ভাল করায় দলটি ঘুরে দাঁড়ানোর সবুজ সংকেত দিচ্ছে। আর দলের এই ঘুরে দাঁড়ানোর নেপথ্যে কাজ করেছে রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ এবং ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ নামে রাজনৈতিক কর্মসূচি। যে তৎপরতার সঙ্গে তিনি কংগ্রেসের কথা মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন, সেটারও প্রশংসা করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, এবারের লোকসভা নির্বাচনে এই ভালো ফলাফলের কৃতিত্ব পুরোটাই রাহুল গান্ধীর। এমনকি কংগ্রেস দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে নিজেও রাহুল গান্ধীকেই বিরোধী দলীয় নেতার পদ গ্রহণ করতে অনুরোধ করেছেন। তবে বিরোধী দলের নেতার চেয়ারে বসবেন কিনা বিষয়টি এখনও খোলসা করেননি রাহুল গান্ধী। এমতাবস্থায় এই পদে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের নাম উচ্চারিত হচ্ছে।
এবার উত্তর প্রদেশে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি ৬২টি আসনে ও কংগ্রেস ১৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিলো। নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি ৬২টি আসনের মধ্যে ৩৭টি আসনে জিতেছে। আর কংগ্রেস ১৭টি আসনের মধ্যে ৬টিতে জয় পায়। তবে যেহেতু সমাজবাদী পার্টি এককভাবে লোকসভায় মোট আসনের ১০ শতাংশ আসন পায়নি, অর্থাৎ ৫৫ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেনি, তাই বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ারে অখিলেশ যাদবের বসার সম্ভাবনা নেই।
ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুটি কারণে হয়তো রাহুল গান্ধী বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ারে বসতে চাইছেন না। প্রথমত, বিরোধী দলীয় নেতা হলে রাহুলকে লোকসভায়ই আটকে থাকতে হবে। সামলাতে হবে বিরোধী দলীয় নেতার গুরু দায়িত্ব। মাঠে নেমে সংগঠনের ভোল বদলানার জন্য ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ এবং ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র মাধ্যমে জনসংযোগের যে চেষ্টা রাহুল গান্ধী করছেন, সেটা বিরোধী দলনেতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে করা কঠিন হবে।
আরও একটি কারণে রাহুল গান্ধী বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ারে বসতে চাইছেন না। কারণটি হলো- সোনিয়া গান্ধী ইতোমধ্যেই কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেত্রীর পদে রয়েছেন। এবং শনিবারের বৈঠকে আবারও কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেত্রীর পদে বসার আহবান জানানো হয়েছে।
এখন রাহুল যদি লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা হয়ে যান, তাহলে আবারও পরিবারতন্ত্রের অভিযোগে সরব হওয়ার সুযোগ পাবেন কংগ্রেসবিরোধীরা। তাই ভারতের লোকসভায় বিরোধী দলীয় নেতার চেয়ারে কে বসছেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও রয়েই গেছে।
এমআর//