অর্থনীতি

অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অরক্ষিত ব্যাংক খাত: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

অনিয়ম দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে দেশের ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। সেটা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। অর্থনীতির চালিকাশক্তির অন্যতম উপাদান ব্যাংক খাত হলেও সদ্য প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতকে ঘুরে দাঁড় করানোর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এখন খাতটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। বললেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

সোমবার (১০ জুন) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অর্থনীতির চালচিত্র এবং প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে একটি অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, যার নাম বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ব্যাংকে ১০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হলেই দৃষ্টিগোচর হয়। কিন্তু এত টাকা পাচার হচ্ছে এবং অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে, তাহলে কী কাজ করছে এই সংস্থাটি? আমরা আসলে এই সংস্থাকে যথাযথ কাজে লাগাতে পারিনি।

সময়মতো সঠিক পদক্ষেপের অভাবে মূল্যস্ফীতি আমাদের ওপর গেড়ে বসেছে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ এই অর্থনীতিবিদ। বিশ্বাসযোগ্য নীতি এবং নীতি সংস্কারের অভাব এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ভুল নীতির ওপর চলার কারণে মৌলিক অনেকগুলো দুর্বলতা প্রকাশ্যে এসেছে। তার মধ্যে মূল্যস্ফীতি, অর্থপাচার, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, রিজার্ভের অবনমন, রাজস্ব আয় হ্রাস অন্যতম। মৌলিক নীতিগত পরিবর্তন না আনলে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিক এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ঘাটতি পূরণে আমরা দেশ এবং বিদেশ থেকে একের পর এক ঋণ নিয়েই চলেছি। ঋণের ওপর নির্ভর করে এভাবে অর্থনীতি চলতে থাকলে একসময় বাজেট দেউলিয়া না হলেও বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে। এই মুহূর্তে আমাদের অর্থনীতির সবগুলো সূচক খারাপ।’

তিনি আরও বলেন, যতদিন সুযোগগুলো ভালো ছিল, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ছিল, রেমিট্যান্স ভালো ছিল, রিজার্ভের অবস্থাও ভালো ছিল। এবং যেসব অর্থনৈতিক ত্রুটি ছিল সেগুলো হজম করার শক্তিও ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের অর্থনীতির সেই শক্তি নেই। ৯০ এর দশকে বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের অবস্থা একই রকম ছিল। কিন্তু এখন তাদের বিদেশি বিনিয়োগ আমাদের থেকে কয়েকগুণ বেশি। তারা মাথাপিছু আয়েও অনেক এগিয়ে।

দুর্নীতির বিষয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সিংহভাগ দুর্নীতিবাজ উচ্চবিত্ত যখন সরকারের কর পরিশোধ করে না, তখন কিছু করদাতার ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিলে তারাও আর সৎ থাকে না। আমরা ক্রমেই নৈতিকতাহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছি। আমরা স্মার্ট হতে যাচ্ছি কিন্তু দুর্নীতির কারণে স্মার্ট হতে পারছি না। আমাদের দেশে ঘুষ নেওয়া অপরাধ কিন্তু দেয়া অপরাধ নয়।

বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে অর্থনীতির মতো সংবেদনশীল খাতগুলোকে ছাড় দিয়ে ক্ষমতার রাজনীতি করার পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ। তা না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কেএস/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন