জাতীয়

পরিচয় গোপন করে জন্মসনদ নিয়েছে ১০২ রোহিঙ্গা

পরিচায় গোপন করে জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যাচ্ছেন এ দেশে আশ্রয় নেয়া অনেক রোহিঙ্গা। তাদের কেউ কেউ আবার পাসপোর্ট নিয়ে দেশের বাইরেও যাচ্ছেন। সম্প্রতি এসব ঘটনার মধ্যে নতুন করে আরও ১০২ জন রোহিঙ্গার জালিয়াতির খবর সামনে এসেছে।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনসহ (ডিএনসিসি) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১০২ জন রোহিঙ্গা তাদের পরিচয় গোপন করে জন্ম নিবন্ধন নিয়েছেন। এদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন জোনের অফিস থেকে ৪৯ জন এই সনদ নিয়েছেন। এসব নিবন্ধন বাতিলের জন্য ইতোমধ্যে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার জেনারেল সামিউল ইসলাম রাহাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ইতোমধ্যে জন্ম নিবন্ধন নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়েছে। নিবন্ধনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের তৎক্ষণাৎ ডাকা হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরু-আল-কায়েস বলেন, জন্ম নিবন্ধন নম্বরগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চেক করেছি। আমাদের কোনো জোন থেকেই সেগুলো রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এগুলো হয়তো বাইরে কোথাও থেকে তৈরি করা হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন,  বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গেলো ২৬ মে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ পুলিশের পাসপোর্ট শাখার স্পেশাল ব্রাঞ্চ এসব জন্ম নিবন্ধন বাতিলের জন্য অনুরোধ করে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, 'সংযুক্ত তালিকায় বর্ণিত ১০২ জন জন্ম নিবন্ধনধারী ব্যক্তি অবৈধ উপায়ে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে জন্ম নিবন্ধন গ্রহণ করে বাংলাদেশী পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন।গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের পাসপোর্টের বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধান করা হয়। অধিকতর অনুসন্ধানে তালিকায় বর্ণিত ব্যক্তিগণের পাসপোর্টে উল্লিখিত স্থায়ী ঠিকানা সঠিক পাওয়া যায় নাই।  উল্লিখিত ব্যক্তিগণ তাদের নামের পার্শ্বে বর্ণিত বিভিন্ন স্থান হতে দালাল চক্র, অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইত্যাদি ব্যক্তিগণের সহায়তায় প্রতারণামূলকভাবে বাংলাদেশী জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তালিকায় বর্ণিত জন্ম নিবন্ধনধারী ব্যক্তিগণ রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ভুক্ত মিয়ানমারের নাগরিক।

চিঠিতে তালিকায় বর্ণিত রোহিঙ্গাদের নামে ইস্যুকৃত জন্ম নিবন্ধন বাতিলসহ মিয়ানমারের নাগরিকগণকে (রোহিঙ্গা) অবৈধ উপায়ে নিবন্ধন প্রদান করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যেও বলা হয়েছে।

এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গেলো ৫ জুন জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তর থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়।

ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো চিঠিতে পুলিশের চিঠির বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়, 'আপনার আওতাধীন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন হতে প্রায় ৪৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, আইন বর্হিভূতভাবে নিবন্ধনকৃত ৪৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্ম সনদ ইতোমধ্যে বিডিআরআইএস সিস্টেম হতে স্থগিত করা হয়েছে।'

পরে গেলো রোববার (৯ জুন) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে ঢাকা উত্তরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সকল আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

ঢাকা উত্তরের সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, 'উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত পত্রের মর্মানুযায়ী বর্ণিত রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্ম সনদ প্রদানের সময় দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের যথা সময়ে যথাস্থানে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করণের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।'

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন