আন্তর্জাতিক

নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হওয়া গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে কী থাকছে

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলমান যুদ্ধ অবসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একটি ‘যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব’ পাস করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।

সোমবার(১০ জুন) নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪ সদস্য রাষ্ট্র ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। ভোট দেয়া থেকে  বিরত ছিল শুধুমাত্র রাশিয়া।

গত ৩১ মে ফিলিস্তিনের গাজায় তিন ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের এ প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

কী থাকছে বাইডেনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে:

মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেওয়া প্রস্তাবে মূলত তিনটি ধাপে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। জিম্মি ও বন্দী বিনিময়ের পাশাপাশি গাজাসহ এই অঞ্চলের শান্ত পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবে।

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার পূর্বাংশে সরে যাবে এবং ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের দখল করা সীমান্তে চলে যাবে। এসময় দৈনিক অন্তত ৮ ঘণ্টা ইসরায়েলি সামরিক বা বেসামরিক বিমান গাজার  আকাশে উড়বে না।  বন্দী-জিম্মি বিনিময়ের দিন  অন্তত ১০ ঘণ্টা আগে থেকে কোনো ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান উড়বে না।

প্রথম ধাপের ৭ম দিনে ইসরায়েলি বাহিনী আল-রশীদ স্ট্রিট থেকে আরও পূর্ব দিকে সরে যাবে। এই সময়ে গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা চালু এবং বেসামরিক গাজাবাসী তাদের নিজ বাড়িতে ফেরার সুযোগ পাবে।

প্রথম ধাপের ২২ দিনের মধ্যে হামাসের হাতে জিম্মি এক-তৃতীয়াংশ ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েলি বাহিনী এসময় সেন্ট্রাল গাজা থেকে সরে গিয়ে গাজা-ইসরায়েল বিভক্তকারী সীমানায় চলে যাবে। এই সময়ে বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী নিজ বাড়িতে ফিরতে থাকবে।

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে হামাস তাদের হাতে জীবিত থাকা ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। ইসরায়েলি একজন জিম্মির বিপরীতে ২০ জন করে বন্দী ফিলিস্তিনি নারী বা শিশু মুক্তি পাবে। মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের আর কখনো গ্রেপ্তার করবে না মর্মে ইসরায়েলকে নিশ্চয়তা দিতে হবে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে হামাসের হাতে জিম্মি প্রত্যেক ইসরায়েলি নারী সেনার বিপরীতে ৪০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে বাধ্য থাকবে ইসরায়েল।

প্রস্তাব অনুসারে, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে ৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস  এবং  পরবর্তীতে প্রতি তিন দিন পরপর ৩ জন করে ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পাবে।

এ ছাড়া, যুদ্ধবিরতির ১৪ তম দিনে যুদ্ধাহত হামাস যোদ্ধাসহ অন্যান্য সশস্ত্র সদস্যদের রাফাহ হয়ে মিসরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্যই এই ব্যবস্থা।

এই অঞ্চলকে শান্ত রাখার উপায় নিয়ে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ১৬ তম দিনে হামাস ও ইসরায়েল পরোক্ষ আলোচনা শুরু করবে। প্রথম ধাপে গাজা উপত্যকায় বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করবে জাতিসংঘ ও এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংগঠনসহ সবাই।

বাইডেনের প্রস্তাবনায় বলা হয়, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপেই গাজার বিধ্বস্ত অবকাঠামো পুনরায় গড়ে তুলতে কার্যক্রম শুরু হবে। এ জন্য  একটি সমন্বয়কারী কমিটি গঠন করে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স ফোর্সকে প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে। এছাড়া, নিজ ভূমিতে বাস্তুচ্যুত হওয়াদের  জন্য অস্থায়ী আবাস গড়ার কথাও বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়।

৪২ দিনব্যাপী যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে হামাস ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই একটি স্থায়ী স্থিতাবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঐক্যমতে পৌঁছবে। এসময়ে বিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা প্রনয়ন ও  বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব আয়োজন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির তৃতীয় ধাপের মেয়াদও হবে ৪২ দিন। এসময় নিহত হামাস যোদ্ধা বা  ইসরায়েলি সেনাদের মরদেহ বিনিময় করা হবে। গাজা গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি ৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। তৃতীয় ধাপে  হামাসসহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো গাজায় কোনো সামরিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারবে না বলে প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়।

যুদ্ধবিরতির তৃতীয় ধাপ চলার সময় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন বা পক্ষগুলো যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করার কোনো সরঞ্জাম, কাঁচামাল বা অন্যান্য উপাদান আমদানি করতে পারবে না।

প্রসঙ্গত, সোমবার পাশ হওয়া ওই  যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইসরায়েল ও হামাসকে অবিলম্বে মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড। যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবকে নতুন সুযোগ বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

এদিকে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন