কম ওজন নিয়ে চিন্তিত? জেনে নিন বাড়ানোর উপায়
ওয়েট বা ওজন এমন একটি ব্যাপার যা বেশি হলে সমস্যা, আবার কম হলেও সমস্যা। প্রতিটি মানুষের বয়স, হাইট অনুযায়ী একটি আর্দশ ওজন থাকে। সেই স্বাভাবিক ও আদর্শ ওজন মেনটেইন করা সবার জন্য জরুরি। আমরা সাধারণত অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকি, কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন থাকাটাও চিন্তার বিষয়।
অনেকে মনে করেন, বেশি পরিমাণে খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। কম ওজন নিয়ে যারা টেনশনে আছেন, আজকের ফিচারটি তাদের জন্য। সহজ ও কার্যকরী টিপস জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
ওজন কম কেন হয়?
বডি মাস ইনডেক্স (BMI) ব্যবহার করে খুব সহজেই বোঝা যায় হেলদি ওয়েট রেঞ্জে আপনি আছেন কিনা। উচ্চতা ও ওজন দিয়ে আপনি বডি মাস ইনডেক্স বের করতে পারেন। বডি মাস ইনডেক্স ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে থাকলে সেটি হেলদি রেঞ্জ হিসেবে ধরা হয়। এক্সপার্টদের মতে, বডি মাস ইনডেক্স ১৮.৫ এর কম হলে সেটি আন্ডার ওয়েট হিসেবে কাউন্ট করা হয়। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ওজন কম হওয়ার কারণগুলো কী।
# ইটিং ডিসঅর্ডার বা অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা (ধীরে ধীরে খাওয়ার ইচ্ছা কমতে থাকে, ওজন কমতে থাকে)
# সিলিয়াক ডিজিজ (জন্মগত সমস্যা, যাতে রোগীর পরিপাকতন্ত্র গ্লুটেনের প্রতি অতিসংবেদনশীল থাকে)
# থাইরয়েড সমস্যা
# টাইপ ১ ডায়াবেটিস
# বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন
# ড্রাগ, অতিরিক্ত স্ট্রেস
# জেনেটিক্স
ওজন বৃদ্ধি করার দারুণ কিছু উপায়
১. ক্যালরি কাউন্ট খেয়াল রাখা
ক্যালরির পরিমাণ বাড়িয়ে ওজন বৃদ্ধি করা যায়। যেমন আপনার এখন যতটুকু ক্যালরি প্রয়োজন তারচেয়ে বেশি পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। ক্যালরি ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে কতটুকু ক্যালরি বার্ন করা প্রয়োজন জানতে পারবেন। যদি আপনি ধীরে সুস্থে ওজন বাড়াতে চান, তাহলে ৩০০-৫০০ ক্যালরি বেশি রাখতে হবে, আর যদি দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে চান তাহলে ৭০০-১০০০ ক্যালরি বেশি রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে প্রোপার ডায়েট প্ল্যান নিতে পারেন।
২. প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা
পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন (বিশেষ করে উদ্ভিজ প্রোটিন) ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ মাসল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। হেলদি ওয়েট গেইনের জন্য হাই প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন মাংস, মাছ, ডিম, ডেইরি আইটেম, বাদাম ইত্যাদি আপনার ফুড চার্টে ইনক্লুড করে ফেলুন।
৩. হেলদি ফ্যাট ও ফাইব্রাস কার্ব ইনক্লুড করা
ওজন বৃদ্ধি করতে চাচ্ছেন, এর জন্য বেশি বেশি কোক, জাংক ফুড, বিরিয়ানি খাচ্ছেন? এগুলো খেলে ওজন হয়তো বাড়বে, কিন্তু তার সাথে সাথে হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্যকর কিন্তু ওজন বৃদ্ধিতে কার্যকর, এমন খাবারগুলো প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন। রিফাইন্ড ও প্রসেসড কার্বহাইড্রেট এড়িয়ে চলা বেটার। হেলদি ফ্যাট আপনাকে চুজ করতে হবে। পূর্ণ ননীযুক্ত দুধ, ভেজিটেবল অয়েল, অ্যাভোকোডা, মাংস, চিজ, পিনাট বাটার, স্যামন ইত্যাদি ডায়েট চার্টে রাখুন।
৪. প্রোটিন স্মুদি খাওয়া
প্রোটিন স্মুদি ওজন বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকর। বিভিন্ন ধরনের ফ্রুটস, নাটস দিয়ে ঘরে তৈরি করে নিতে পারেন স্মুদি। ঘরে সহজে তৈরি করা যায় এখন স্মুদির রেসিপি দেখে নেই চলুন-
একটি কলা, এক চামচ চিয়া সিডস, হাফ কাপ মিষ্টি দই ও এক টেবিল চামচ পিনাট বাটার- সবগুলো উপাদান মিক্স করলে পেয়ে যাবেন সুস্বাদু বানানা প্রোটিন স্মুদি।
দুই কাপ ফুল ফ্যাট মিল্ক, কয়েকটি নাটস (আমন্ড, কাজু), দু’টি খেজুর, এক চামচ কোকোয়া পাউডার, এক স্কুপ ভ্যানিলা আইসক্রিম- সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে ব্লেন্ড করে তৈরি করে নিন চোকো ভ্যানিলা স্মুদি।
৫. ব্যায়াম করা
পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ওজন বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যায়াম ক্ষুধা বাড়াতে, খাবার ভালোমতো হজম করতেও সাহায্য করে।
৬. এনার্জি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন, কাঠবাদাম, আখরোট, চিনাবাদাম প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখুন। এছাড়া কিসমিস, খেজুর, ফুল ফ্যাট টকদই, চিজ, ক্রিম, অ্যাভোকাডো অয়েল, অলিভ অয়েল, ওটস, ব্রাউন রাইস, চিকেন, বিফ, মিষ্টি আলু, আলু, ডার্ক চকলেট, নারকেল দুধ ইত্যাদি খাবারগুলো এনার্জি ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
কিছু কুইক টিপস
১। খাবারের পূর্বে পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন।
২। সারাক্ষণ পেট ভরে রাখার ট্রাই করুন।
৩। ফুল ক্রিম দুধ পান করুন।
৪। বড় খাবারের প্লেটে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৫। কফি পান করার অভ্যাস থাকলে, এতে ক্রিম ব্যবহার করুন।
৬। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভ্যাস করুন।
আন্ডার ওয়েট প্রবলেম যাদের তাদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস আর কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে খুব দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে পারা যাবে। তার পাশাপাশি হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করাও খুব জরুরি।
জেএইচ