আন্তর্জাতিক

ইসরাইলে বৃষ্টির মতো শতাধিক রকেট ছুড়েছে হিজবুল্লাহ

সম্প্রতি লেবাননে হামলা চালিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এর প্রতিশোধ নিতেই দফায় দফায় ইসরাইলের দিকে বৃষ্টির মতো শতাধিক রকেট ছুড়েছে সংগঠনটি। গেলো কয়েক সপ্তাহে হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছে ইসরাইল।

বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবাননে ইসরাইলের চালানো বিমান হামলায় দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ কমান্ডার মোহাম্মদ নিমাহ নাসের নিহত হয়েছেন। হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে চালানো ইসরাইলি হামলায় তিনি প্রাণ হারান।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইসরাইলে হামলা ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট ছোড়ার কথাও জানিয়েছে হিজবুল্লাহ।

হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, জেষ্ঠ্য কমান্ডারকে হত্যার প্রতিবাদে তারা ইসরাইলের সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে শতাধিক রকেট নিক্ষেপ করেছে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর ছোড়া অধিকাংশ রকেটই খোলা জায়গায় পড়েছে। এতে কিছু জায়গায় আগুন ধরে গেলেও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, হিজবুল্লাহর আজিজ ইউনিটের নেতৃত্বে ছিলেন নাসের। ইউনিটটি দক্ষিণ-পশ্চিম লেবানন থেকে রকেট হামলা চালাতো।

তালেব সামি আবদুল্লাহকে হত্যার পর নাসের ছিলেন ইসরাইলি হামলার শিকার হিজবুল্লাহর সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ নেতা। গেলো মাসে সামি আবদুল্লাহ নিহত হন। এর জবাবে এক দিনেই উত্তর ইসরাইলে ২০০টির বেশি রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে হিজবুল্লাহ।

এছাড়াও ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ৮টি অবস্থানে ‘‘বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন’’ নিক্ষেপ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে হিজবুল্লাহ। বিবৃতিতে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠী বলেছে, তাদের যোদ্ধারা গোলান মালভূমিসহ সীমান্ত এলাকায় ইসরায়েলি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোনের বহর নিক্ষেপ করেছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার লেবানন সীমান্ত লাগোয়া ইসরাইলি ভূখণ্ডজুড়ে এবং গোলান মালভূমিতে রকেট ও বিমান হামলার সাইরেন বাজিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের আন্তঃসীমান্ত সংঘাত বাড়তে পারে এমন আশঙ্কার মাঝে পশ্চিমে নাহারিয়া থেকে পূর্বে গোলান মালভূমি পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন অংশে ৯০ মিনিটের মধ্যে অন্তত ১৭টি সতর্কবার্তা জারি করেছে ইসরাইল।

গেলো ৭ অক্টোবর হামাসের সাথে ইসরাইলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রত্যেক দিন ইসরায়েলি সামরিক চৌকি ও ভূখণ্ডে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও তাদের মিত্ররা। ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত এলাকায় এবারের এই সংঘাত ২০০৬ সালের ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

ফরাসি এ সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইল-লেবানন সীমান্তে ৯ মাস ধরে চলা সহিংসতায় লেবাননে ইসরাইলি হামলায় ৩০০ জনেরও বেশি হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ও ৮৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরাইলি ১৮ সৈন্য ও ১০ বেসামরিক নিহত হয়েছেন।

গেলো বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ঢুকে এক হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাসের শত শত যোদ্ধা। একই সঙ্গে আরও ২০০ জনের বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে ফিলিস্তিনি এই স্বাধীনতাকামী সংগঠনের সদস্যরা। পরে ওই দিনই গাজায় পুরোমাত্রার যুদ্ধ শুরু করে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী।

গাজার ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গেলো ৯ মাসের যুদ্ধে ইসরাইলি হামলায় গাজায় প্রায় ৩৮ হাজার ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় আহত হয়েছেন আরও হাজার হাজার মানুষ। ইসরাইলের অব্যাহত বোমা হামলায় উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন