কুবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৫
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মধ্যরাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ দু'পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হওয়া ঘন্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাৎ মো সায়েম।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগকর্মী ইকবাল, রাকিব, অনুপ দাশ, সোহাগ, নজরুল হলের সাকিব হাসান দীপ, আশরাফুল রায়হানসহ দুইপক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রত্যাক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই দুই হলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যায় নজরুল হলের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করে বঙ্গবন্ধু হলের এক ছাত্রলীগকর্মী। সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত সাড়ে ১২টার দিকে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় দুই হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় লাঠি, রড, দেশীয় অস্ত্র হাতে দেখা দেখা যায় একাধিক ছাত্রলীগ কর্মীকে।
এসময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করা চেষ্টা করে এবং নেতাকর্মীদের হলে ফিরিয়ে নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, বঙ্গবন্ধুর হলের তিন-চারশ পোলাপাইন আমাদের হলে এসে হামলা চালায়। আমি হলের সবাইকে ভিতরে রাখার চেষ্টা করেছি। ওরা যেভাবে হামলা চালিয়েছে কয়েক জন মাডার হয়ে যেত। এই রকম নৃশংস হামলার বিচার চাই।
বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠিক সম্পাদক আবু সাদাৎ মো. সায়েম বলেন, আমরা চা খেতে হলের সামনে দোকানে যাও। সেখানে নজরুল হলের রায়হানসহ কয়েকজন উপস্থিত হয়। এসময় রায়হান আমাদের হলের একজনকে মারধর শুরু করেন। আমি তাদের নিবৃত্ত করতে নজরুল হলের সামনে নিয়ে গেলে কয়েকজন জুনিয়র মিলে আমার উপর অতর্কিত হামলা করে। আমি তবুও তাদের সভাপতিসহ সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের দিকে ইট মারতে থাকে। এতে অনেকে আহত হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজউল ইসলাম মাজেদ বলেন, এসময় কারা কি করেছে আমি দেখছি । আমি সবাইকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি । এখন হলের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে অবস্থান করছে। যে ঘটনাটি ঘটেছে এ ঘটনা পরবর্তীতে না ঘটার জন্য আমার সভাপতির সাথে বসতে হবে এবং সবাইকে নিয়ে সমাধান করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন প্রভোস্ট ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম শিক্ষার্থীদের হলে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ছাত্রদের সংঘর্ষের কথা শুনে আমি হলে আসি। এরপর প্রক্টোরিয়াল টিমকে সাথে নিয়ে শিক্ষার্থীদের হলে নিয়ে আসি এবং হলের ফটক বন্ধ করে দেই। এখন শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করছে। তবে আমার শিক্ষার্থীদের যারা মারধর করেছে তাদের বিচার চাই।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট ড. মিহির লাল ভৌমিকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি ঘটনা শুনে আমরা ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়। এখন শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ অবস্থানে রয়েছে। আমরা প্রক্টরিয়াল বডি বসে এটা সমাধান করব।
উল্লেখ্য, এর আগে শুক্রবার নামায পড়তে যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী সেলিম রেজাকে পথ থেকে সরে দাঁড়াতে বলে কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগ নেতা ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল রায়হান। নামায শেষে রায়হানের কাছে বিষয়টি জানতে চায় বঙ্গবন্ধু হলের সেলিম রেজা, রিফাতসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। এ সময় দুই হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
তাসনিয়া রহমান