আলোচনার টেবিলে ইসরাইল, গাজায় স্থায়ী শান্তি ফিরবে তো?
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলমান যুদ্ধ অবসানে বেশ কয়েকবার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও তিন দফার একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্যদিকে,অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়ে প্রস্তাব পাশ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
তারপরও কাজের কাজ কিছু হয়নি। ধরাকে সরা জ্ঞান করেছে ইসরাইল। জাতিসংঘের আহবান আর জো বাইডেনের প্রস্তাবকে থোড়াই কেয়ার করে গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসনের উদ্দেশ্যে, গাজায় চিরতরে হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করা।
গাজায় অভিযান ১০ মাসে পড়লেও ইসরাইল কী পেরেছে, সেই উদ্দেশ্য সফল করতে? গাজায় তাদের সাফল্যের ঝুড়িতে ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির মরদেহ, মাটির সাথে মিশে যাওয়া ৮০ ভাগ স্থাপনা, হাসপাতালের বেডে ছটফট করা ৮৮ হাজারে বেশি নারী ও শিশুর আর্তচিৎকার ছাড়া আর কিছুই নেই। বিশ্লেষকদের মতে, হামাস নির্মূলে ইসরাইলের সাফল্য শূন্য।
বরং ইসরাইলের হামলায় দিন দিন হামাস আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। হামাসের হামলায় বেশ কয়েকজন সেনাকর্মকর্তা ছাড়াও চার শতাধিক সেনা হারিয়েছে ইসরাইল। ঘরে বাইরের প্রবল চাপতো রয়েছে। নতুন বিপদ-হামাসের সমর্থনে লেবাননের ইরানপন্থী হিজবুল্লাহর হামলা। দিশেহারা এখন নেতানিয়াহু প্রশাসন।
খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে বাইডেনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে তাই দর কষাকষিতে ব্যস্ত ইসরাইল। কথায় বলে না ‘গর্তে পড়লে হাতি, চামচিকেও মারে লাথি’। বিশ্লেষকদের অনেকের মতে-ইসরাইলের দশা এমনটাই হয়েছে। কাতারের রাজধানী দোহায় চলা আলোচনায় নেতানিয়াহু প্রশাসনের পক্ষে দেন দরবার করছেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেথ ও মোসাদ প্রধানরা।
আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র পরিচালক উইলিয়াম বার্নস, মিশরের গোয়েন্দা সংস্থা মিশরীয় জেনারেল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেট এর পরিচালক আব্বাস কামেল ও কাতারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুল রহমান আল থানি।
বাইডেনের প্রস্তাবে প্রথম ধাপে রয়েছে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি যেটি পরে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে গড়াবে। প্রথম দফার ব্যাপারে আলোচনায় সব পক্ষ একমত হয়েছেন বলে টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে। এখন স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরাইলের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাবে মধ্যস্থকারী দেশগুলো। তবে হামাসের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে লিখিত নিশ্চিয়তা চাওয়া হয়েছে।
হামাস লিখিত নিশ্চয়তা চাইলেও ইসরাইল চাইছে প্রথম ধাপ থেকে দ্বিতীয় ধাপে যেতে কিছু শর্ত আরোপ করতে। তেলআবিব চাইছে-পূর্ব শর্ত পূরণ না হলে ইসরাইল ফের গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করার।
তবে যুদ্ধবিরতির আলোচনার আড়ালে গাজার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইল। শুধু তাই নয় গাজা সিটিতে নতুন করে হামলা চালানোর জন্য লোকজনকে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসন।
ইসরাইলের এমন নির্দেশে ক্ষুব্ধ হয়েছে হামাসসহ প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো। লেবাননের হিজবুল্লাহ এরই মধ্যে জানিয় দিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেই তারা ইসরাইলে হামলা চালানো বন্ধ করবে। হিজবুল্লাহ নেতা নাসরাল্লাহ বলেন, উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত পরিস্থিতি ইসরাইলকে বুঝিয়ে দিয়েছে, যদি তারা এই অবস্থা বন্ধ করতে চায় তবে তাদের গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে।
তাই দোহায় চলা যুদ্ধবিরতির আলোচনার উপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু। মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশর বলছে, প্রথম দফা আলোচনায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তাই গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে তারা খুবই আশাবাদী।
এমআর//