আন্তর্জাতিক

হামলার শিকার হয়েছেন যেসব মার্কিন প্রেসিডেন্ট

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের হত্যা বা হত্যাচেষ্টার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও এমন বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রক্তাক্ত হতে দেখল বিশ্ববাসী। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলার এলাকায় ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। ওই সময় সেখানে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন তিনি।

ট্রাম্প বক্তব্য শুরুর পরপরই মঞ্চ বরাবর গুলি করেন আততায়ী। গুলিতে ট্রাম্পের ডান কানের ওপরের অংশে ফুটো হয়ে যায়। দর্শক সারিতে থাকা একজন নিহত এবং আরও দুজন গুরুতর আহত হন। সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের গুলিতে নিহত হন সন্দেহভাজন হামলাকারীও।

একনজরে দেখে নেয়া যাক কোন কোন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হামলার শিকার হয়েছেন– আব্রাহাম লিংকন আব্রাহাম লিংকন ছিলেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যাকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসির ফোর্ডস থিয়েটারে ‘আওয়ার আমেরিকান কাজিন’ নাটকে অংশ নেওয়ার সময় জন উইলকস বোথ নামে এক ব্যক্তি তাকে গুলি করেন। মাথার পেছনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর লিংকনকে চিকিৎসার জন্য থিয়েটার থেকে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালেই তিনি মারা যান। বলা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ অধিকারের প্রতি লিংকনের সমর্থন থাকার ফলেই, তাকে হত্যা করা হয়েছিল। জেমস গারফিল্ড গারফিল্ড হলেন হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া দ্বিতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কার্যভার নেয়ার ছয় মাসের মাথায় তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। জানা গেছে, ১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন থেকে নিউ ইংল্যান্ডে যাওয়া জন্য ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। সেসময় চার্লস গুইটো নামক এক আতাতায়ী তাকে গুলি করেন। কয়েক সপ্তাহ হোয়াইট হাউজে চিকিৎসা নেয়ার পর সেপ্টেম্বরে নিউ জার্সিতে নিয়ে গেলে গারফিল্ড মারা যান। গারফিল্ডের স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার আর্থার। আর চার্লস গুইটো দোষী সাব্যস্ত করা হন ও ১৮৮২ সালের জুনে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। উইলিয়াম ম্যাককিনলে ম্যাককিনলি ১৯০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বাফেলোতে বক্তব্য দেয়ার পরে গুলিবিদ্ধ হন। বক্তব্য শেষে তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে করমর্দন করছিলেন। সেসময় লিয়ন এফ. সলগোস নামক এক ব্যক্তি তার বুকে গুলি চালান। চিকিৎসকরা আশা করেছিলেন, ম্যাককিনলি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু গুলির ক্ষতগুলোর চারপাশে গ্যাংগ্রিন তৈরি হয়। ম্যাককিনলি তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার ছয় মাস পর ১৯০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান। ২৮ বছর বয়সী হামলাকারী সলগোস বিচারে দোষী সাব্যস্ত হন ও ১৯০১ সালের ২৯ অক্টোবর বৈদ্যুতিক চেয়ারে মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে তার শাস্তি কার্যকর করা হয়। ম্যাককিনলির স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট। জন এফ. কেনেডি কেনেডিকে ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডালাস শহরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। সেসময় তিনি মোটর শোভাযাত্রা করতে করতে দশর্কদের ভিড়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই কেনেডির ঘাড় ও মাথার পেছনে গুলি করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে মাত্র ৪৬ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্টকে পার্কল্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পরেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যাকাণ্ড ছিল গত শতকের সবচাইতে নাটকীয় এবং চাঞ্চল্যকর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি। পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এই ঘটনা। এর কারণও আছে। প্রেসিডেন্ট কেনেডি ছিলেন গড়পড়তা মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে অনেক আলাদা। সুদর্শন এই প্রেসিডেন্ট ও তার স্ত্রী জ্যাকি হোয়াইট হাউজে আলাদা গ্ল্যামার যোগ করেছিলেন। অ্যান্ড্রু জ্যাকসন আমেরিকার গৃহযুদ্ধের আগে প্রেসিডেন্ট ছিলেন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন। ক্যাপিটলে একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। সেখানে তাকে লক্ষ্য করে পরপর দুবার গুলি করেন হামলাকারী। কিন্তু একটি গুলিও জ্যাকসনের শরীরে লাগেনি। বেঁচে যান তিনি।

 

আহত-মার্কিন-প্রেসিডেন্টরা থিওডোর রুজভেল্ট সময়টা ১৯১২ সাল। ট্রাম্পের মতো আবারও প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন থিওডোর রুজভেল্ট। প্রচার সভায় বক্তব্য দিতে উইসকনসিনের মিলওয়াউকিতে যাচ্ছিলেন তিনি। একজন সেলুন তত্ত্বাবধানকারী তাকে গুলি করেন। তবে হামলাটি ব্যর্থ হয়। জানা যায়, রুজভেল্টের পকেটে ভাঁজ করে রাখা ৫০ পৃষ্ঠার বক্তব্যের অনুলিপি ও ধাতব চশমার কেস গুলির গতি কমিয়ে দেয়ায় গুরুতরভাবে আহত হননি তিনি। হামলার পরও সমাবেশে বক্তব্য দেন রুজভেল্ট। ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তখনো দায়িত্ব নেননি ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। ১৯৩৩ সালে মিয়ামিতে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন আততায়ী। বন্দুকধারী গুইসেপ্পে জাঙ্গারা রুজভেল্টকে হত্যা করতে না পারলেও শিকাগোর মেয়র আন্তন সেরমাককে মেরে ফেলেন। হ্যারি ট্রুম্যান রুজভেল্টের মৃত্যুর পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন হ্যারি ট্রুম্যান। ১৯৫০ সালে হোয়াইট হাউসে তার ওপর বন্দুক হামলা চালান পুয়ের্তো রিকান এক জাতীয়তাবাদী। তবে বেঁচে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জর্জ ওয়ালেস তখন জর্জ আলাবামা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর। ১৯৭২ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ওয়াশিংটনের বাইরে তাঁর ওপর গুলি করা হয়। এতে প্রাণে বাঁচলেও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন এই রাজনীতিক। জেরাল্ড ফোর্ড সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক ডেস্কজেরাল্ড ফোর্ড ১৯৭৫ সালের দুবার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন। এরমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোতে হামলার আগেই একবার তা রুখে দেয়া হয়। এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর সান ফ্রান্সিসকোতেও তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তবে সেবার এক পথচারীর কারণে তিনি বেঁচে যান। রোনাল্ড রেগান সময়টা ১৯৮১, ওয়াশিংটনের হিলটন হোটেলের বাইরে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। হঠাৎ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। আহত হন প্রেসিডেন্ট। রিগ্যানের চেয়েও গুরুতর আহত হয়েছিলেন তার প্রেস সেক্রেটারি জেমস ব্র্যাডি। পরে এই ব্যক্তি আমেরিকায় বন্দুক নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ বুশ ২০০৫ সালে জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাশভিলির সঙ্গে তিবিলিসিতে একটি সমাবেশে যোগদান করছিলেন। সেসময় তাকে লক্ষ্য করে একটি হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ওই ঘটনায় ভ্লাদিমির আরুটিউনিয়ান নামক এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ও তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। বারাক ওবামা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও হত্যাচেষ্টা করা হয়। ২০১১ সালে হোয়াইট হাউজে তিনি হত্যাচেষ্টার শিকার হন। ওবামাকে হত্যাচেষ্টায় আইডাহোর এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের কড়া নিরাপত্তাস্তর ভেদ করেও এসব হত্যাকাণ্ড দেশটির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের জন্য চিন্তার বিষয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। হামলার হার ডেমোক্রেটিকদের তুলনায় রিপাবলিকানদের ওপরেই বেশি করা হয়েছে।

 

সূত্র: এপি ও সিএনএন

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন