আজ ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
আজ শুক্রবার (২ আগস্ট) ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ নামে কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।
সমন্বয়ক জানান, শুক্রবার বাদ জুমা দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা ও ছাত্র জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন ও জুমার নামাজ শেষে ছাত্র জনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক অবশেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ছাড়া পাওয়া সমন্বয়কেরা হলেন- নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুম। তারা ছয়জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়ে দুই সমন্বয়ক সারজিস ও হাসনাত তাদের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দেন। তবে স্ট্যাটাস দেয়ার পর তাদের আইডি হ্যাক হয়ে যায়।
সারজিস তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। আপনারা কথা রাখেননি।
তিনি আরও লেখেন, ৬ দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ছয়জনকে আটকে রাখা যায়। কিন্তু এই বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে কিভাবে আটকে রাখবেন? দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন, প্রতিনিয়ত সেগুলো কিভাবে নিবৃত করবেন?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে সারজিস তার লেখেন, আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর আঘাত করেছেন। সারাদেশে আমার স্কুল কলেজের ভাইবোনদের ওপর লাঠিচার্জ করেছেন। যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন, বাবাকে হুমকি দিয়েছেন। মাশরুর তার উদাহরণ।
তিনি আরও লিখেছেন, যারা একটিবারের জন্যও এ আন্দোলনে এসেছে, তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, গ্রেফতারের ভয়ে থাকে। এমন অনেকে আছে, যাদের পরিবার এখনো তাদের খোঁজ পায়নি। এমন তো হওয়া উচিত ছিল না! রিকশা থেকে নামিয়ে প্রিজন ভ্যানে তুলছেন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমার বোনদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন। কি ভাবছেন? এভাবেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে?
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আরও লিখেছেন, এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যে কোনো কিছু মোকাবিলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই। যতদিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে; গণগ্রেফতার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে; ততদিন এ লড়াই চলবে।
আরেক সমন্বয়ক হাসনাত তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, এই গণগ্রেপ্তার কেবল নিরপরাধ মানুষের অধিকার হরণ নয়; বরং আমাদের সমগ্র সমাজের উপর চাপিয়ে দেয়া একটি নিষ্ঠুরতার প্রতিফলন। এটি মুক্তচিন্তা ও মানবাধিকারের প্রতি এক ভয়ানক আঘাত। আমাদের এই আন্দোলন শুধুমাত্র ব্যক্তির মুক্তির জন্য নয়; বরং বৈষম্য, নিপীড়ন, গণগ্রেপ্তার এবং ছাত্র নির্যাতনের বিরুদ্ধে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও লিখেন, ‘এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই মুক্ত নই। গণগ্রেফতার গণঘৃণার নামান্তর।
এর পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, রাজপথের আন্দোলনের সিদ্ধান্ত রাজপথ থেকেই আসবে। ডিবি অফিস থেকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আদায়কৃত ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে রাজপথে নেমে আসা ছাত্র-জনতাকে সালাম জানাই।
ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়ে গতকাল দিবাগত রাতে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, গত ১৯ জুলাই থেকে অকথ্য নির্যাতন ও মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। গুম, হাসপাতালে অবরুদ্ধ, এবং সর্বশেষ ডিবি হেফাজতের নামে ছাত্র-জনতা থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার হীন কৌশলের শিকার হয়েছি। অনশনে থাকা অবস্থায় আমার সুগার ও অক্সিজেন স্যাচুরেশন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি।
তিনি বলেন, রাজপথের আন্দোলনের সিদ্ধান্ত রাজপথ থেকেই নেয়া হবে। ডিবি অফিস থেকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আদায়কৃত ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে রাজপথে নেমে আসা ছাত্র-জনতাকে সালাম জানাই।
জেএইচ