আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

শরৎপ্রাতে বাজলো জয়ধ্বনি

শারদীয় দুর্গোৎসবের পূণ্যলগ্ন, শুভ মহালয়া আজ। দোরগোড়ায় দেবীপক্ষ। বাঙ্গালি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এ হচ্ছে দুর্গা দেবীর আগমনী বার্তা। অনেক জায়গায় উমা মণ্ডপে এসে গেলেও শাস্ত্রমতে দেবী মর্ত্যে আসেন অনেকটা পরে। বোধন হয় ষষ্ঠী তিথিতে।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া। দেবি দূর্গা আজ পা রেখেছেন মর্ত্যলোকে।

সনাতন ধর্মে কোনও শুভ কাজ করতে গেলে, পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়, কার্যাদি-অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। তর্পণ মানে খুশি করা।  

সেই অনুসারে এ মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন, তারা তাদের পূর্বপূরুষদের স্মরণ করে, তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াতদের আত্মা মর্ত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আত্মার এই সমাবেশকে মহালয় বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষ দিন এটি।

সনাতন ধর্ম অনুসারে, বছরে একবার প্রয়াত পিতা-মাতার উদ্দেশে পিণ্ডি দান করতে হয়। সেই তিথিতে করতে হয় যে তিথিতে তারা প্রয়াত হয়েছেন। সনাতন ধর্মের কার্যাদি কোনও তারিখ অনুসারে করা হয় না, তিথি অনুসারে হয়। বছর ঘুরে আবারো উমা দেবী আসছেন তার বাপের বাড়ি। হিমালয়ের কৈলাশে স্বামী শিবের বাস। সেখান থেকেই সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে আসেন সমতল ভূমির এই বাংলায়। সঙ্গে নিয়ে আসেন গণেশ, কার্ত্তিক, লক্ষী আর সরস্বতীকে। প্রতিবছর শরৎকালে দেবী দুর্গার এই আগমন হয় তার নিজ ভূমিতে। হিন্দু শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত।

ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই পূজারীরা দুর্গা মায়ের আগমন ধ্বনি শুনতে পান।

দুর্গোৎসব ঘিরে নানা আয়োজনে ব্যস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সব ধর্ম ও শ্রেণির বাঙালির মধ্যেও। পূজার আনন্দে মাতোয়ারা বাঙালি জাতি। মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমা সাজসজ্জার কাজ। দেবী মূর্তি নির্মাণ শেষ, গায়ে রঙ ছোঁয়ানোর অপেক্ষায় দক্ষ ভাস্কর, নিপুণ শিল্পী। আয়োজকদের ফরমায়েশ আর ডিজাইন অনুযায়ী গড়ে তুলছেন পূজাম-প। চলছে সংস্কারের শেষ কাজটুকু।

মহালয়ার তার চেয়ে বড় গুরুত্ব আছে, ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবিকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য। আসল দূর্গা পূজা হলো বসন্তে, সেটাকে বাসন্তি পূজা বলা হয়। শ্রীরামচন্দ্র অকালে-অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে দেবির অকাল-বোধন বলা হয়। 

পঞ্জিকা মতে এ বছর দেবী দুর্গার আগামন গজে। তার ফলে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। আর দেবীর গমন নৌকায়। যার অর্থ শস্যবৃদ্ধি এবং জলবৃদ্ধি। এই নিদানে যারা বিশ্বাস রাখেন তাদের কাছে এই বছরটা সত্যিই ভাল। কারণ, গমন এবং আগমন দুইয়েই দেবী শস্যপূর্ণ বসুন্ধরার আশীর্বাদ দিয়ে যাবেন।

তাসনিয়া রহমান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন