বিএনপি

নির্বাচনে অংশ নেবেন খালেদা জিয়া

ছবি: সংগৃহীত

শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যেতে পারলে ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলবেন। বললেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

শনিবার (১০ আগস্ট) বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিষয়াবলী নিয়ে ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। 

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি প্রধানের। তিনি তখনও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।

রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়েছে বলে বিএনপি বরাবরই বলে এসেছে।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন। এরপর ছয় মাস পরপর আবেদনের প্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল সরকার।

২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত থাকলেও এবার গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর সাজা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পান খালেদা জিয়া। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন গেলো ৬ আগস্ট সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন।

গতকাল এনডিটিভিকে দেয়া দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি খুবই অসুস্থ। হাসপাতালে আছেন। তিনি মাল্টিডিসপ্লিনারি রোগে ভুগছেন। দেশে তার ভালো চিকিৎসা হচ্ছিল না। আমরা আদালত এবং সরকারকে বারবার অনুরোধ করেছিলাম উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে যেন বিদেশে পাঠানো হয়। কিন্তু সেটি হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এখন বিদেশ যাওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা তার নেই। তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তিনি যদি শারীরিকভাবে ফিট থাকেন তাহলে অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবেন।’

দলটির মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি এখন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তবে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে সময় লাগবে। কারণ শেখ হাসিনার সরকারের সময় নির্বাচনী কাঠামো কার্যত ভেঙে দেয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা দূষিত হয়ে গেছে এবং এটি এখন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অবস্থানে নেই। এ কারণে তাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি বলে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যে দাবি করেছেন এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক দল এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি নিজে বলেছেন তিনি পদত্যাগ করেছেন। এটি কোনো জবরদস্তি ছিল না…বিপ্লব ছিল। যখন লাখ লাখ মানুষ শেখ হাসিনার বাড়ির দিকে আসছিল; তার নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী বলেছে তার সামনে দুটি অপশন রয়েছে: এখানে থাকুন মানুষের রোষে পড়ুন। আর নয় দেশ ছাড়ুন। তিনি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।’

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটি পুরোটি সত্য নয়। যখন আমাদের দেশে বা অন্য দেশে পরিবর্তন হয়…বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশে…কিছু মানুষ সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে। বাংলাদেশে দুর্ভাগ্যবশত দায়িত্বে থাকা দলের নেতারা ভিকটিমের শিকার হন। তারা মুসলিম হোক আর হিন্দু হোক। সংখ্যালঘুদের ওপর বিক্ষিপ্ত কিছু হামলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো রাজনৈতিক অথবা পদ্ধতিগত এজেন্ডা ছিল না। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক পরিবেশ অসাধারণ।’


কেএস/ 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন