আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

কাগজে-কলমে ভাই-বোন প্রকৃতপক্ষে তারা স্বামী-স্ত্রী

স্ত্রীকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দিতে বোন বানিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন আনিছুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। আনিছুর-সোনালী খাতুনের ঘরে তিনটি সন্তান থাকলেও কাগজে-কলমে তারা ভাই-বোন।

বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। 

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুটিনাওডাঙ্গা আমিরটারী তালবেরহাট গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হক ও জমিলা বেগম দম্পতির ছেলে আনিছুর রহমান। আট ভাই বোনের মধ্যে আনিছুর রহমান বড় ছেলে । তিনি রংপুর বেতারে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করেন।

২০০৭ সালে উলিপুর উপজেলার নাগড়াকুরা গ্রামের বাসিন্দা মৃত রবিউল ইসলামের মেয়ে সোনালী খাতুনকে বিয়ে করেন আনিছুর। বিয়ের পর উপজেলার সাপখাওয়া দাখিল মাদরাসায় ২০১০-১১ সেশনে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন সোনালী। সেখানে তার শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেন তিনি। মাদরাসা থেকে সোনালী ২০১৩ সালে জিপিএ-২.৯৪ পেয়ে দাখিল পাস করেন। ২০১৪ সালে তথ্য গোপন করে শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মা দেখিয়ে ভোটার হন সোনালী। 

আনিছুর রহমানের ছোট ভাই খালেক ভোটার আইডি দেখে নিশ্চিত করেন সোনালী খাতুন তার ভাবী। তিনি স্বীকার করেন, যখন ভোটার হয়েছিল তখন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সুযোগ সুবিধা পেতে তার ভাই এমনটি করেছেন।

এ বিষয়ে গ্রাম পুলিশ জহুরুল হক বলেন, ‘আনিছুর রহমান তার বাল্য কালের বন্ধু। সোনালী খাতুন আনিছুরের স্ত্রী। ভোটার আইডিতে সোনালীর বাবা-মায়ের জায়গায় আনিছুরের বাবা-মায়ের নাম ব্যবহার করেছে তিনি জানেন।’

আনিছুর রহমান জানান, ভুলবশত তার স্ত্রী এমনটি করেছেন। ভোটার আইডি এবং শিক্ষা সনদ ঠিক করে নেবেন। তবে এ বিষয়ে তার স্ত্রী সোনালীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন  বলেন, সোনালী খাতুন ২০১৪ সালে ভোটার হালনাগাদ করনে। সে সময় দাখিল সনদ এবং জন্ম নিবন্ধন তথ্য দিয়ে ভোটার হয়েছেন। তথ্য গোপন করার বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ভোটার তালিকা আইন ও বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরআগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের দুই ছেলে আনিছুর রহমান এবং আজিজুল হক তথ্য গোপন করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। এনআইডিতে দুই ভাইয়ের একই নাম হলেও আলাদা আলাদা ছবি দিয়ে রয়েছে দুটি জাতীয় পরিচয় পত্র। রংপুর বেতারে ২০১২ সালে আনিছুর রহমান অফিস সহায়ক পদে চাকরি নেন। আর আজিজুল হক ২০১৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওয়েম্যান পদে অষ্টম শ্রেণী পাস দেখিয়ে চাকরি নেন।

আজিজুল হক তার ভোটার আইডি সংশোধন করে বড় ভাই আনিছুর রহমানের  তথ্য উপাত্ত দিয়ে নতুন আইডি তৈরি করেন। তিনি পড়াশোনা না করেও বড় ভাই আনিছুর রহমানের অষ্টম শ্রেণী পাসের সনদ ব্যবহার করেন।  এ ঘটনায় ২০১৪ সালে এনআইডিতে তথ্য গোপন করে চাকরির বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পরে তদন্ত করে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
আসাদ ভূঁইয়া

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন