ফ্রান্স ছাড়তে পারবেন না শতাধিক সন্তানের পিতা পাভেল দুরভ
সুদর্শন, স্মার্ট আর তরুণ যুবক। বয়স মাত্র ৩৯। অবিবাহিত,তারপরও একটা নয়,দুটো নয়,শতাধিক সন্তানের বাবা তিনি। তবে মজার ব্যাপার হলো, এসব সন্তানের বিষয়টি তিনি ঘূর্ণাক্ষরেও জানতেন না। সম্প্রতি তাকে জানানো হয়েছে তার সন্তানদের ব্যাপারে। তাকে জানানো হয়েছে শুধু একটি মাত্র দেশে নয়, তার সন্তানেরা ছড়িয়ে ছটিয়ে রয়েছে অন্তত ১২টি দেশে। এতে তিনি বিস্ময় প্রকাশ আর মজা করে বলেছেন, এমন কারও ক্ষেত্রে কী ভাবে এটা সম্ভব, যে কিনা এখনও বিয়েই করেনি আর বরাবর সিঙ্গলই থাকতে চেয়েছেন? বলা হচ্ছে মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে বিচার বিভাগীয় তত্ত্বাবধানে থাকা তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পাভেল দুরভের কথা।
বার্তা আদান-প্রদানের অত্যন্ত জনপ্রিয় অ্যাপ টেলিগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। ৩৯ বছর বয়সী পাভেল গ্রেপ্তার হয়ে এখন ফ্রান্সে আছেন। তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়নি। তবে বিচার বিভাগীয় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। ৫০ লাখ ইউরো জমা রাখতে হবে তাঁকে।
রুশ বংশোদ্ভূত পাভেল দুরভের ফ্রান্সের নাগরিকত্ব রয়েছে। এখন তাঁকে প্রতি সপ্তাহে দুইবার ফরাসি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে হাজিরা দিতে হবে। তাই তিনি ফ্রান্সের ভূখণ্ড ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি পাবেন না।
রাশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী পাভেল দুরভ অনেকের কাছে অনেক কিছু। নিজের ভাইকে সাথে নিয়ে ২০১৩ সালে টেলিগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন দুরভ। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও উইচ্যাটের পরই টেলিগ্রামের অবস্থান। প্রতিষ্ঠার পরই রাশিয়া, ইউক্রেন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য দেশে টেলিগ্রাম বেশ জনপ্রিয় হতে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই সোশ্যাল মিডিয়াটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে ১০০ কোটি হবে বলে আশা করছে তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।
প্রতিষ্ঠার এক বছর পরই রাশিয়া ছেড়ে যান দুরভ। ইউজারদের ডাটা সরকারের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করায় ২০১৮ সালে রাশিয়ায় এই অ্যাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও তিন বছর তা তুলে নেওয়া হয়। রাশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী দুরভ দুবাই থাকেন। কথিত আছে, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে দুরভের।
রাশিয়া ছাড়ার পর বার্লিন, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, সান ফ্রান্সিসকো ঘুরে শেষমেশ পাভেল দুরভ টেলিগ্রামের সদর দফতর হিসাবে দুবাইকে বেছে নেন। সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হত তার অ্যাপের কাজকর্ম। পাভেলের মোট সম্পত্তির পরিমাণ শুনলে অবাক হতে হবে। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৩ হাজার কোটি ডলার। এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করেন ব্যক্তিগত বিমানে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অবৈধ লেনদেন, কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুসারে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহে অস্বীকৃতি এবং শিশু পর্ণোগ্রাফির ছবি প্রকাশ করা। পাশাপাশি রয়েছে জালিয়াতি,সাইবার বুলিং, মাদক পাচার, প্রতারণা ও অর্থপাচারের অপকর্মের আখড়া হয়ে উঠেছিলো টেলিগ্রাম অ্যাপ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে প্যারিসের লো বোর্গেট বিমানবন্দরে নামতেই ফরাসি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি।
ফরাসি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, টেলিগ্রামকে ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী মাদক পাচার, শিশু পর্নোগ্রাফি ও যে প্রতারণার ঘটনা ঘটে, সেগুলোর একজন সহযোগী পাভেল। টেলিগ্রামে কনটেন্ট সম্পাদনা খুব একটা হয় না বলেই এসব হয়ে থাকে। টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহারও হয় লাগামছাড়া।
লে বুর্গেট বিমানবন্দরে গ্রেপ্তারের সময় পাভেল দুরভ দাবি করেন, তিনি ১০০ জনেরও বেশি সন্তানের বাবা হয়েছেন।কিন্তু কী ভাবে বিষয়টি শুরু হল? পাভেল দুরভ জানিয়েছেন সেই কাহিনিও।
দুরভ জানান, ১৫ বছর আগে পাভেল নামে তার এক বন্ধু তাঁর কাছে খুব অদ্ভুত এক প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। বন্ধুটি পাভেলকে জানান, ফার্টিলিটি-ইস্যুর কারণে তিনি ও তাঁর স্ত্রী সন্তান নিতে পারছেন না। তবে, পাভেল যদি তাঁদের স্পার্ম ধার দেন তবে তাঁরা বেবি নিতে পারবেন! পাভেল নাকি কথাটা সেদিন হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর বন্ধু বিষয়টি নিয়ে খুবই সিরিয়াস। শুরুতে দ্বিধাগ্রস্ত হলেও, দুরভ প্রস্তাবটিতে প্ররোচিত হয়েছিলেন এবং শুক্রাণু দিতে রাজি হন। এভাবে একটি ক্লিনিকে তিনি সুক্রাণু দান করেছেন অসংখ্যবার। আর ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষই সম্প্রতি জানিয়ে দেয় পাভেল দুরভ শতাধিক সন্তানের বাবা।
এমআর//