এক টাকার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে শাস্তি মাথা পেতে নেবো: সমন্বয়ক হাসনাত
টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সম্প্রতি দেশের ১১ জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। বন্যাকবলিত মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে জমা পড়ে কয়েক কোটি নগদ অর্থ আর অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী। সেই টাকা গচ্ছিত রয়েছে ব্যাংকে। তবে প্রশ্ন উঠেছে সেই টাকা বন্যার্তদের জন্য ব্যয় না করে কেন ব্যাংকে রাখা হয়েছে?
ত্রাণ তহবিলের জন্য টাকা উঠিয়ে সেগুলো কেন ব্যাংকে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, "কেউ যদি এক টাকার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে দেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবো।"
সেই টাকা বন্যার্তদের পুর্নবাসনের জন্য ব্যয় করা হবে বলে ফেসবুকে দেয়া এক ভিডিও পোস্টে জানান তিনি।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ত্রাণ তহবিলের বেশিরভাগ টাকা পরিকল্পিতভাবেই ব্যাংকে রাখা হয়েছে। তহবিল সংগ্রহের শুরুতেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, অর্থ সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে সব খরচ না করে বেশিরভাগই জমা রাখা হবে। কারণ, আগের অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা জেনেছি যে, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরবর্তী ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর অর্থ সহায়তা বেশি প্রয়োজন হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় এখন ওই অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ব্যয় করা হবে। আরও আগে থেকেই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর নির্মাণসহ অন্য কাজগুলো করে দেয়ার কথা ভাবছিলাম, কিন্তু আয়-ব্যয়ের অডিট কমপ্লিট না হওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছিল না।
হাসনাত বলেন, নিরীক্ষা শেষ করে শিগগিরই তহবিলের সব অর্থ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ব্যয় করার পরিকল্পনা আছে। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকার যে তহবিল গঠন করেছে, সেখানেই টাকাগুলো দেয়া হবে। এর ফলে সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবেই আমাদের তহবিলের অর্থ মানুষের কাজে আসবে বলে আশা রাখি। বন্যার্তদের সহযোগিতার উদ্দেশে গঠিত ত্রাণ তহবিলের যে ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখা হয়েছে, সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ত্রাণ সহায়তার জন্য যত অর্থ আমরা পেয়েছি, সেগুলোর প্রতিটি পয়সার হিসাব আমাদের কাছে আছে। কাজেই এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, প্রাথমিক ত্রাণ কার্যক্রমে খরচের পর তহবিলের বাকি অর্থের বেশিরভাগই জমা রাখা হয়েছে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায়। চাইলেও সেগুলো কেউ আত্মসাৎ করতে পারবে না। কারণ, সেগুলো বিশেষভাবে খোলা হয়েছে, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকও যুক্ত রয়েছেন। তিনিসহ আরও দুইজনের সম্মিলিত সিগনেচার ছাড়া কেউ টাকা তুলতে পারবে না।
হাসনাত আরও বলেন, অর্থের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তহবিলের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আমরা ত্রাণ কার্যক্রমের আয় ও ব্যয়ের ওপর একটি অডিট করছি এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। সিএ ফার্মের প্রফেশনাল ব্যক্তিদের দিয়েই নিজ দায়িত্বে এটা আমরা করছি, যাতে পরবর্তী সময়ে কেউ কোনো অভিযোগ বা অপবাদ দিতে না পারে।
তিনি বলেন, প্লাটফর্মের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলায় যত সভা-সমাবেশ হচ্ছে, সেগুলোতেও ত্রাণের কোনো অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে না। কেউ যদি দেখাতে পারে যে, আমরা ত্রাণ তহবিলের কোনো টাকা অন্যকাজে ব্যবহার করছি, তাহলে যা শাস্তি দেয়া হবে, বিনাবাক্যে সেটা মাথা পেতে নেব।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যাতায়াত, থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য খরচের ব্যাপারে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু করার পর থেকেই সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় আমাদের সহযোগিতা করে আসছেন, এখনও করছেন। আমরা শুধু সেবাটা নিচ্ছি। এক্ষেত্রে কেউ কেউ তাদের গাড়ি দিয়ে আমাদের পৌঁছে দিচ্ছেন, অনেকে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন, এভাবেই চলছে। তবে এখন যেহেতু এটা নিয়েও কথা উঠছে, সে জন্য আগামীতে কারা কী ধরনের সেবা দিয়ে আমাদের সহায়তা করছেন, সেটার তালিকাও আমরা প্রকাশের কথা ভাবছি।
এসি//