প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
আলোচনা ছাড়া ভারতের কোনও অপশন নেই, আমাদেরও নেই
গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের অস্বস্তিকর সম্পর্ক তৈরি হলেও দু্ই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আলোচনা অব্যাহত রাখা ছাড়া ভারতের যেমন কোনও অপশন নেই, বাংলাদেশেরও তেমন কোনও অপশন। এমনটাই জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
শনিবার(২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন এ তথ্য জানান। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ উপলক্ষে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি উল্লেখ করে এম তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘জয়শংকরের সঙ্গে আমাদের দেখা হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে যে এক ধরনের টানাপড়েন চলছে, এটা স্বীকার করতে হবে। সমস্যার সমাধান করতে হলে, সমস্যার অস্তিত্ব অস্বীকার করলে চলবে না। আমরা অবশ্যই টানাপড়েন পেছনে ফেলতে চেষ্টা করবো এবং ওয়ার্কিং রিলেশন যেন হয়। তবে সম্পর্কটা হতে হবে সার্বভৌমত্ব, মর্যাদা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে। এর ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া সম্ভব এবং আমরা সেই চেষ্টা করবো।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক অনেক বিষয় আছে এবং সেগুলো নিয়ে আলোচনা বজায় রাখতেই হবে। এটি নিয়ে ভারতেরও কোনও অপশন নেই, আমাদেরও কোনও অপশন নেই।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ৫৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল আসছে ২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হবে। তবে রোববারই (২২ সেপ্টেম্বর) রওনা হবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
যে কারণে ড. ইউনূসের সঙ্গে মোদির বৈঠক হচ্ছে না
প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক জানতে চান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে কিনা। জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একই সময়ে নিউ ইয়র্কে যাচ্ছেন না। কারণ নরেন্দ্র মোদি আগে চলে আসবেন। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা দেরিতে যাচ্ছেন। কাজেই তাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে।’
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু বক্তব্যের কারণে দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তেজনার কারণে মোদি ও ইউনূসের মধ্যে বৈঠক হচ্ছে না। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অনেক কথা আমাদেরও পছন্দ নাও হতে পারে। কাজেই আমার কথা ওনার পছন্দ হলো না, বা ওনার কথা আমার পছন্দ হলো না— এটি নিয়ে বেশি বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসময় আরও বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয় যে, এ জন্য বাংলাদেশ ভারত থেকে বহু দূরে যাবে। আবার ভারতও অন্য কোথাও চলে যাবে এবং প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে না। প্রতিবেশী যেহেতু পরিবর্তন হয় না, কাজেই কথা পছন্দ হোক বা না হোক... ভারত থেকেও বিভিন্ন সময়ে অগ্রহণযোগ্য কথাবার্তা হয়েছে। এজন্য আমার মনে হয়, এ বিষয়টিতে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। শুধু এ কারণে তিনি (মোদি) দেখা করবেন না, বা দেখা হচ্ছে না– আমার সেটি মনে হয় না।’
এমআর//