জাতীয়

চলতি মাসেই ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক ছবি: সংগৃহীত

চলতি মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফরে আসছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ও মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান ভলকার তুর্ক।  পররাষ্ট্র মন্ত্র্রণালয়ের একটি সূত্র বিষয়টি বায়ান্ন টিভিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।  

ওই সূত্রটি বোলছে, ঢাকা সফরকালে  প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন ভলকার তুর্ক। এছাড়াও পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সুশীল সমাজ ও ছাত্র নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে। তবে কোনো রাজনৈতিক দলের  সঙ্গে বৈঠক করবেন কিনা তা জানা যায়নি।

গেলো মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলার ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষা করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর)স্থানীয় সময় সকাল ১১ টায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভলকার তুর্কের সঙ্গে ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও মানবাধিকার বিষয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মানবাধিকার হাইকমিশনার হিসেবে এটিই হবে ভলকার তুর্কের প্রথম ঢাকা সফর। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে রোহিঙ্গা ঢলের সময় বাংলাদেশ সফরে আসেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এর অ‍্যাসিস্ট‍্যান্ট হাইকমিশনার ফর প্রটেকশন হিসেবে। বাংলাদেশে আসার আগে তিনদিনের সফর করেছিলেন মিয়ানমারে।

প্রসঙ্গত, বাংলোদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলার সময়   ভলকার তুর্ক একাধিক বিবৃতি দিয়ে মানবাধিকার রক্ষার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার  ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ন্যায় বিচার ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।

গেলো ১৬ আগস্ট ছাত্র আন্দোলন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের (ইউএনএইচআরসি) প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক বার্তায় হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

এরও আগে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (৭ জানুযারি) পর  ‘নির্বাচনের পরিবেশ সহিংসতা এবং বিরোধীপ্রার্থী ও সমর্থকদের দমনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন ভলকার তুর্ক। নির্বাচনের  পরের  দিন (৮ জানুয়ারি)  এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘ভোটের কয়েক মাস আগে হাজার হাজার বিরোধী সমর্থককে নির্বিচারে আটক কিংবা ভয় দেখানো হয়েছে। এ ধরনের কৌশল সত্যিই প্রকৃত প্রক্রিয়ার জন্য সহায়ক নয়।’’

ওই বিবৃতিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার আরও বলেন, বাংলাদেশে গত ২৮ অক্টোবর থেকে প্রায় ২৫ হাজার বিরোধী সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; যাদের মধ্যে প্রধান বিরোধী দলের নেতারা রয়েছেন। গত দুই মাসে অন্তত ১০ জন বিরোধী সমর্থক হেফাজতে মারা গেছে অথবা নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে আটকের পর সম্ভাব্য নির্যাতন বা কঠোর অবস্থার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক মানবাধিকারকর্মীকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে এবং কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এছাড়া কয়েক ডজন সন্দেহভাজন জোরপূর্বক গুমের ঘটনার কথা জানা গেছে; যার বেশিরভাগই গত নভেম্বরে ঘটেছে।

ভলকার তুর্ক বলেন, ‘এসব ঘটনা অবশ্যই স্বাধীনভাবে তদন্ত করা উচিত এবং দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচারের আওতায় আনতে হবে।’’ তিনি বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় এবং নির্বাচনের দিন আচরণবিধি লঙ্ঘন ও অনিয়মের ঘটনাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং কার্যকরভাবে তদন্ত করা উচিত

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন