ঢাকা এখন বড় আকারের জেলখানা: সলিমুল্লাহ খান
১৯৭১ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১০ লাখ। এখন বলা হচ্ছে দুই কোটি বা আড়াই কোটি। ২০ থেকে ২৫ গুণ জনসংখ্যা বেড়েছে। একটি ক্ষুদ্র ভৌগোলিক এলাকায় এই যে বিপুল জনসমাগম, এটি এখন বড় আকারের জেলখানার মতো হয়েছে। বেওয়ারিশ লাশের মতো রাজধানী ঢাকা শহর শুয়ে আছে বলেও মন্তব্য করেছেন লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।
বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সলিমুল্লাহ খান। রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার ও জাস্ট আরবানের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী ‘ন্যায্য নগর ইশতেহার’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠান হয়।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ঢাকায় যেটা নেই, সেটা হচ্ছে গণযোগাযোগব্যবস্থা। এটা হচ্ছে মানুষের অধিকারের প্রথম স্বীকৃতি। ঢাকায় বাড়িগুলো সাড়ে ৯ ফুটের বেশি ফ্লোর করে না। এটা নয়া ঔপনিবেশিক স্থাপত্য। মানুষকে খোপের মধ্যে চেপে রাখা হয়েছে। ঢাকায় এমন কোনো পায়ে হাঁটা পথ নেই, সেখানে দোকান বসছে না। যেখানে হকাররা কিছু একটা না করছে। সব জায়গায় সিন্ডিকেট।
তিনি আরও বলেন, রমনার রেসকোর্স ময়দানের নাম আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দিয়েছি। ধীরে ধীরে সেখানে কত রকমের স্থাপনা হচ্ছে। আপনি বলবেন স্বাধীনতার স্তম্ভ কোথায় করব আমরা। ওখানে স্বাধীনতা স্তম্ভ করেছি, মাটির নিচে মিউজিয়াম করেছি। কিন্তু ঘুরেফিরে মানুষের চলাচলের অধিকার ক্রমে কমছে। মানুষের নিশ্বাস ফেলার জায়গা...বলা হচ্ছে শহরের হৃৎপিণ্ড হচ্ছে পার্কগুলো। পার্কগুলো কী করে নষ্ট হলো!
তিনি বলেন, ঢাকায় ধানমন্ডি বলে একটা আবাসিক এলাকা করা হয়েছিল। এখন আবাসিক কথাটা আর কেউ ব্যবহার করে না। শুধু ধানমন্ডি। এটা এখন বাণিজ্যিক এলাকা হয়েছে। আগে ছিল মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা। যেটা একটা নদী ছিল, সেটা কেটে লেক বানিয়েছে। দুর্নীতি এক জায়গায় হয়নি। সব জায়গায় হয়েছে।
সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, তারা গোটা এলাকায় (ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা) একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা রাখেনি। সাড়ে তিন কাঠা, পাঁচ কাঠার প্লট। তিন কাঠার প্লট তিন হাজার টাকা, পাঁচ কাঠার প্লট পাঁচ হাজার টাকায় বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এই বাড়িঘর পেয়েছে। কিন্তু সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেননি এখানে আমাদের বাচ্চাদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা থাকবে। একটা পাবলিক লাইব্রেরি থাকবে। এখন আবাসিক প্লট ভাড়া নিয়ে ধানমন্ডি এলাকায় নানা রকম স্কুল করা হচ্ছে।
নগর–পরিকল্পনার বিষয়টি নগর–পরিকল্পনাবিদদের নিয়ন্ত্রণে নেই, রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে বলে মনে করেন সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, এ কারণে আমাদের এখানে বড় বড় আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে ঠিকই কিন্তু জনগণের একত্র হওয়ার জায়গা নেই।
এএম/